ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ আর নেই। তিনি বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে—-রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী ইদগাহ মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দিয়ে প্রথম ও নিজ গ্রাম বেড়বাড়িতে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে মরহুমকে দাফন করা হয়।
পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এ্যাড আব্দুর রশিদ ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ১৯৪৯ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম আহম্মদ আলী বিশ্বাস। কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন করেন। তিনি বেড়বাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।
মরহুমের একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সারের উপর গবেষনারত ড. সাইফুল ইসলাম পিপলু জানান, তার পিতা ১৯৬৮ সাথ থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ৫৩ বছর ধরে তিনি আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠেনের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতে রাণাঘাটে স্থাপিত ইয়ুথ ক্যাম্পে ট্রেনিং করেন। সেখানে তিনি টেনিংরত মুক্তিযোদ্ধাদের কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দলের সংকটময় মুহুর্তে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন।
১৯৮৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ জেলার দপ্তর সম্পাদক ও পরবর্তীতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি সদর থানা যুবলীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ মনোনীত হন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ পদে ও ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কৃষকলীগের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
পারবর্তীতে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ জীবদ্দশায় সমাজসেবামুলক কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতিসহ গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করেন। বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছাড়াও তিনি ফজের আলী স্কুল এন্ড কলেজ, ডাকবাংলা আব্দুর রউফ কলেজ ও বাড়িবাথান দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া তিনি শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাহী সদস্য, পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষন সংসদের সাধারণ সম্পাদক, পাগলাকানাই গন পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক ও পাগলাকানাই সায়াদাতিয়া জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এদিকে মরহুমের মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহে পৌছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিজ দলের নেতাকর্মী ছাড়াও আত্মীয় স্বজন, শুভান্যুধায়ী, উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশাসনের লোকজন তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আজীম-উল-আহসান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন মরহুমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি এ্যাড শফিকুল আজম খান চ ল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুন-অর-রশীদ, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল, হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন, পৌরসভার মেয়র ফারুক হোসেন মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।