চলতি সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসছে। ফলে ২০ দিন পর আবারও উৎপাদনে যাচ্ছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এদিকে আগামী জুনে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে বলে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ আকরাম উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়লার চালানবাহী একটি জাহাজ ইন্দোনেশিয়া থেকে রওনা হয়েছে। আশা করছি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা এখানে পৌঁছে যাবে এবং পরবর্তী চালানগুলোও ধীরে ধীরে আসতে শুরু করবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’
চলতি সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসলে পুনরায় প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট গত বছরের ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে। আর গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু করে কেন্দ্রটি। একইসঙ্গে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট চালুর জন্য কাজ এগিয়ে চলছে।
এসব কাজ পরিদর্শনের জন্য শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তাকে বিভিন্ন প্লান্ট ঘুরিয়ে দেখান। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে এনার্জি পার্টনারশিপ বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নের সহযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে আরও কাজ করব। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে এনার্জি ভারত-বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই সঙ্গে আমাদের পার্টনারশিপও জরুরি।’
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেল প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে এ বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। ১৭ ডিসেম্বর থেকে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া শুরু হয়। তবে ডলার সংকটের কারণে কয়লা আনতে না পারায় উৎপাদন শুরুর এক মাস না যেতেই ১৪ জানুয়ারি বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করা হয়।