অনলাইন ডেস্ক:
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকারী আর প্রেস মালিক মিলে জাল টাকা তৈরির সিন্ডিকেট। জাল রুপি, ডলার ও স্ট্যাম্প তৈরি করে তা দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও পাচার করছে চক্রটি।
চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের আগে প্রায় ২০০ কোটি মূল্যমানের জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো. হারুন অর রশিদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উজ্জল দাস ওরফে সোবহান শিকদার (৩৪), আব্দুর রশিদ (৫৫), মমিনুল ইসলাম (৪৬) ও শাহ মো. তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা মূল্যের জাল টাকা, ভারতীয় রুপি ও ডলার, ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও জালনোট তৈরির বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়।
ডিবিপ্রধান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি দারুসসালাম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকারক চক্রের মূলহোতা উজ্জল দাসকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দারুসসালামের একটি বাসা থেকে বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি মতিঝিল এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিটফোর্ড থেকে রঙ, ফয়েল সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশের জালনোট ও স্ট্যাম্প তৈরি করে আসছিল। বর্তমানে ডলার সংকট হওয়ায় তারা ভারতীয় জাল রুপি ও আমেরিকান জাল ডলার তৈরি করে বিদেশেও পাচার করছিল।
‘তাদের সারা দেশে এজেন্ট রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি টাকার জালনোট ১০ লাখে, এরপর ২০ লাখ ও প্রান্তিক ধাপে ৫০ লাখে বিক্রি করতেন। এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো পরিমাণের জালনোট প্রস্তুত করে দিতেন তারা। বাংলাদেশি টাকার ক্ষেত্রে তারা কম মূল্যমানের নোট যেমন- ১০০ ও ২০০ টাকার নোটও জাল করছিলেন। যা প্রায় খালি চোখে ধরা অসম্ভব’ বলেও জানান তিনি।
হারুন অর রশিদ বলেন, তাদের কাছে যে পরিমাণ জাল টাকা তৈরির কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া গেছে তা দিয়ে আগামী রমজান বা ঈদুল ফিতরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার জাল নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প বাজারে ছাড়তে পারতো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সস্তায় পেয়ে বাইরে থেকে ডলার কিনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। এর দায় যে কিনবে তাকেই নিতে হবে, কারণ ডলার কেনা উচিৎ ব্যাংক অথবা অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ থেকে।
জাল টাকা, ভারতীয় জাল রুপি কিংবা জাল রাজস্ব স্ট্যাম্প তৈরির কারখানায় প্রায়ই অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অসাধু কারবারে জড়িতরা একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনই একটি চক্রের সন্ধানে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ। কোটি কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প, ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশি জাল টাকা এবং এসব তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। প্রেস মালিক আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার মিলে তৈরি করেছে সিন্ডিকেটটি।
আর গ্রেফতারকৃতরা জানান, মতিঝিল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিটফোর্ড থেকে রং ও ফয়েল পেপার সংগ্রহ করে নিজেদের প্রেসে তৈরি হত জাল টাকা ও রুপি।
ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা তৈরির একাধিক চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের অপতৎপরতা রোধে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা।