হোম আন্তর্জাতিক জাতিসংঘে জরুরি আপিল: শেখ হাসিনার বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ

জাতিসংঘে জরুরি আপিল: শেখ হাসিনার বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 44 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ হতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)।

এমন পরিস্থিতিতে লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস ও তাতিয়ান ইটওয়েল সম্প্রতি শেখ হাসিনার পক্ষে জাতিসংঘে একটি জরুরি আপিল দাখিল করেছেন।

আপিলে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ দূতের কাছে এ আপিল আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ ও ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের প্ল্যাটফর্ম ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের ওয়েবসাইটে সোমবার (১০ নভেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্স জানিয়েছে, ওই আপিল আবেদনে দুই ব্রিটিশ আইনজীবী বলেছেন, “বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণের ম্যান্ডেটবিহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে এই বিচারকাজ চলছে।”

এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচারের অধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে আপিলে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, “২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা একটানা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি ও তার দল আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। তবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন পরিণত হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিরাট গণআন্দোলনে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এর ৩ দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।”

এতে আরও বলা হয়, “এরপর শেখ হাসিনা ও আরও দুইজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় তৎকালীন সরকারের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করায় অনুপস্থিতিতেই তার বিচার চলছে। রায় শিগগিরই ঘোষণা হওয়ার কথা। এতে শেখ হাসিনা প্রায় নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।”

শেখ হাসিনার পক্ষে করা দুই ব্রিটিশ আইনজীবীর জরুরি আপিলে বলা হয়, “শেখ হাসিনার সরকার ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ যেমন রয়েছে। একইভাবে দলটির সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধমূলক নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে। তবে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত যেসব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, সেসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।”

আপিলে শেখ হাসিনার পক্ষে দুই আইনজীবীর উল্লেখ করা উদ্বেগগুলোর মধ্যে রয়েছে—

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের অভাব: ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’ (আইসিসিপিআর) সনদের অনুচ্ছেদ ১৪(১) অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার মামলায় বিচারক ও প্রসিকিউটরের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা গুরুতর পক্ষপাতের প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। অভিযোগ আছে, প্রধান প্রসিকিউটর নিজেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

অনুপস্থিতিতে বিচার ও প্রতিরক্ষার সুযোগের অভাব: শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগে অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হচ্ছে, যদিও ভারত থেকে তার প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ এখনও প্রক্রিয়াধীন। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগের বিষয়ে কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি। এছাড়া, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বা তার পক্ষে কাজ করা আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ ও হুমকির ঘটনা ঘটায় তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত এক আইনজীবী প্রতিনিধিত্ব করছেন, যার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ বা পরামর্শ হয়নি।

মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন: এমন এক প্রক্রিয়াগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিচারে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হলে তা কার্যত বিচারবহির্ভূত হত্যার সমতুল্য হবে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বেঁচে থাকার অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন