জাতীয় ডেস্ক:
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নাগরিক সমাজ ধনী দেশগুলোকে বিগত বছরগুলোর সেই বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার জন্য সব দেশকে বাস্তবসম্মত জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
দুবাইয়ের কপ ২৮ জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘LDC’s & MVC Peoples’ Expectations and CoP 28’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন মো. জিয়াউল হক মুক্তা (সিএসআরএল), মো. শামসুদ্দোহা (সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), শামীম আরফিন (এওএসইডি), অ্যাটলে সোলবার্গ (প্ল্যাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট-পিডিডি), মিসেস সামাহ হাদিদ (নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল-এনআরসি), এবং মিস লিডি ন্যাকপিল (এশিয়া প্যাসিফিক মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এপিএমডিডি)সহ আরও অনেকে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি’র আমিনুল হক।
আমিনুল হক প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এই চুক্তিতে কার্বন উদগীরণ কমানোর মনিটরিং এবং রিপোর্টিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পর্যায়ক্রমে শূন্য নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের পিছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করায় তিনি কপ ২৮ প্রেসিডেন্সির সমালোচনা করেন।
তিনি আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনর্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন, সেগুলো হলো: (১) উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক তথ্য ও বিশ্লেষণ অনুসরণ করতে হবে এবং ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, (২) তাদের অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ক্রমবর্ধিত বকেয়া পরিশোধ করতে হবে, (৩) ডিসকোর্স অব নিউ অ্যান্ড কালেক্টিভ ফাইন্যান্সকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং ঋণবহির্ভূত পদ্ধতি দিয়ে তৈরি করতে হবে, (৪) ন্যাপ বা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাকে হতে হবে গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশনের অংশ।
মো. শামসুদ্দোহা প্রশমনের বর্তমান প্রক্রিয়াটিকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেন এবং তিনি বাধ্যতামূলক সময়সীমাসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রশমন কৌশল প্রণয়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যা কম কার্বন নির্গমনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসবে এবং যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকবে। তিনি সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক ফলের ভিত্তিতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যের সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় পরিকল্পনা নিশ্চিত করার দাবি জানান। লিডি ন্যাকপিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পাবলিক ফাইন্যান্স সংকটের আবর্তে আছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই বেসরকারি খাতের ওপর তাদের অত্যধিক নির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। এই নির্ভরতা ধারাবাহিকভাবে খুব কমই কাজে লাগছে এবং প্রায়ই বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। আমাদের জরুরিভিত্তিতে সরকারি অর্থায়নের ওপর নজর দিতে হবে যা ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য এবং সবার মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় কার্যকর কোনো পরিবর্তন ছাড়া ‘বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন’ মন্ত্র সম্পূর্ণ অবাস্তব।
অ্যাটল সোলবার্গ বাস্তচ্যুতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কারণ এটি বিশ্বজুড়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বিরাট সমস্যা তৈরি করছে। তিনি বলেন, আমরা এমন কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাই যা দেশগুলোকে স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে বাস্তুচ্যুতদের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম হবে। শামীম আরফিন বলেন, অর্থের যথেষ্ট জোগান আছে, শুধু সেই অর্থকে দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করতে বিশ্বনেতাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সামাহ হাদিদ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা, এবং এসব অঞ্চলে সম্পদ ও অর্থায়নের অভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় দুর্বল দেশগুলোকে অভিযোজনে সক্ষম করতে এবং জলবায়ু সহিষ্ণু করে তুলতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
জিয়াউল হক মুক্তা গত ০৩ ডিসেম্বর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বিষয়ে কপ প্রেসিডেন্সির বিবৃতির জোরালো বিরোধিতা করার আহ্বান জানান কপে অংশ নেওয়া সব রাষ্ট্রপক্ষকে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্সির এই বিবৃতি জলবায়ু বিজ্ঞান এবং টঘঋঈঈঈ গঠনের মৌলিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক।