জাতীয় ডেস্ক:
চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ১৯তম শিশু মেধা বৃত্তি পরীক্ষা ও শিশু মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ প্রাঙ্গণে এ শিশুমেধা বৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ গ্রহণ করেন।
আয়োজকরা জানান, এই মেধা বৃত্তি পরীক্ষার মধ্যদিয়ে আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম মেধাদীপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠবে। গত ৯ ডিসেম্বর জেলার ৮টি জেলার ১৩১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫৫৮ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে চিনাইর বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় শিশুমেধা বৃত্তি পরীক্ষা। পরে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এর দেড়মাসের মাথায় শিশুমেলার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় শিশুমেধা বৃত্তি। আজ আঞ্চলিকভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে বৃত্তি তুলে দেওয়া হয়।
পরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে দেশ প্রেমিক নাগরিক হয়ে উঠুক। তারা দেশের জন্য ভূমিকা রাখুক। দেশের জন্য তারা কিছু কাজ করে দেশকে তারা আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারে। এটাই আমার প্রত্যাশা থাকবে।’
মেধাবৃত্তি পরিক্ষা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও পরীক্ষা পদ্ধতির একটি মান উন্নয়ন দাঁড় করিয়েছি। এখানে বলতে হয় না যে, তোমরা কেউ নকল করবা না। এমনিতেই সে নকল করে না। এখানে ছোট বাচ্চা যে, ক্লাস ওয়ানে পড়ে সে এসে পাবলিক পরীক্ষার মতো পরীক্ষা দিচ্ছে। সেটা আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাকে আমরা ভীতিমুক্ত পরিবেশে প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছি। আমাদের এখানে শিক্ষা মানেই হচ্ছে আনন্দ ফুর্তির মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করা। ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানে সেটি আমরা নিশ্চিত করেছি।’
অনুষ্ঠানে চিনাইর মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রথমত আমরা পরীক্ষাটাকে বাচ্চাদের জন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশে করার চেষ্টা করেছি। প্রতিযোগিতাও একটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হয়। সেটি নিশ্চিত করার জন্য শতভাগ স্বচ্ছতা জবাব দিহিতার প্রয়োজন। আমরা সেটা আগে নিশ্চিত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার সিলেবাস থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন খাতা দেখা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই আমরা শুদ্ধতা বজায় রাখি এবং তাদের আনন্দের বিষয়টাও লক্ষ্য রেখেই আমরা সকল কাজ করি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্যই চেতনা দীপ্ত কবি সাহিত্যিকদের এ মেধাবৃত্তি অনুষ্ঠানে নিয়ে আসি। যেন বাচ্চারা জানতে পারে মুক্তিযুদ্ধ কী এবং কীভাবে হয়েছিল। এর মধ্যে দিয়ে শিশুদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা জাগ্রত হবে। ভালো মানুষ হয়ে উঠবে।’
শুধুমাত্র পড়াশুনা বিদ্যা দিয়ে নয়, ভালো মানুষ হতে হবে। সেটা কিন্তু এই মেধাবৃত্তি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তাদের মধ্যে জাগ্রত হচ্ছে। আগামী দিনে এ শিক্ষাবৃত্তির পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা কোথাও জানান এ শিক্ষাবিদ।
এদিকে আখাউড়া উপজেলা থেকে আসা বৃত্তি পাওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থী রুদ্রজিৎ পাল জানায়, পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে আমার ভালো লেগেছে। আমি এমন মেধাবৃত্তি পরীক্ষার মতো আরও বড়বড় পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে চাই। আমি বড় হয়ে একজন ডাক্তার হতে চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে আসা বৃত্তিপ্রাপ্ত অপর কোমলমতি শিক্ষার্থী জারিন তানজিন বলে, ‘আজ আমার অনেক ভালো লেগেছে, আমি বৃত্তি পেয়েছি। আমি বড় হয়ে সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হতে চাই।’
মো. রাসেল মিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আয়োজনটি চমৎকার ছিল। আমরা মনে করি এ ধরনের আয়োজনের মধ্য নতুন প্রজন্ম সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ মো. ইকবাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ৭৯ জন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি প্রাপ্ত ১৫৬ শিক্ষার্থীকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা ও ক্রেস্ট, সনদপত্র দেয়া হয়। তাছাড়া মেধাভিত্তিক পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা একজনকে দেওয়া হয় ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী ডেসটিনেশন অ্যাওয়ার্ড এবং নগদ এককালীন ১২০০০ টাকা। শিশুমেধা বৃত্তি ও শিশু মেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আশপাশে বসেছে লোকজ মেলা।