হোম অন্যান্যসারাদেশ ‘চোখের সামনে মেয়ের পাওডা ক্যামনে পড়ে গেল আল্লাহ’

অনলাইন ডেস্ক :

রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে সাদিয়া আক্তার (৩২) তার স্বামী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে যাচ্ছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু, পথিমধ্যে ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে তাদের বহন করা বাসটি মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে চারজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়। এই দুর্ঘটনায় তার মেজ মেয়ে মোছা. সামিয়ার (৭) শরীর থেকে পা আলাদা হয়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে মেয়ের অবস্থার কথা ভেবে বিলাপ করছিলেন চিকিৎসাধীন সাদিয়া আক্তার। দুর্ঘটনায় তিনিও আঘাত পেয়েছেন মাথায়। শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে গেছে তাঁর। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিলাপ করতে করতে সাদিয়া বলেন, ‘চোখের সামনে মেয়ের পাওডা ক্যামনে পড়ে গেল, আল্লাহ।’

কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সামিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। সামিয়ার বড় বোন মোছা. সাফাও (১১) মাথায় আঘাত পেয়েছে। তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। এতে অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে আছে সাদিয়ার পরিবার। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে থাকেন তারা। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছোট মেয়ের বয়স চার মাস। নাম ফারিহা। মেজ মেয়ে মোছা. সামিয়া বারবার তার বাবা-মাকে ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে বলছিল। সে কথার স্মৃতিচারণ করে বিলাপ করতে করতে মা সাদিয়া বলছিলেন, ‘সামিয়া বারবার বাড়ি যেতে চাচ্ছিল। তাই বাড়ি যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথের মাঝ থেকে তার পা উধাও হয়ে গেল! কেটে পড়ে গেল। আল্লাহ, আমাদের সঙ্গে এসব কেন হলো?’

সাদিয়া আক্তারের বড় মেয়ে মোছা. সাফা। সাফা সব সময় তার ছোটবোনদের পোশাক কেনার সময় পছন্দ করে দেয়। সাদিয়া বলছিলেন, ‘সাফা নিজের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে সামিয়ার জন্য পোশাক কেনে। এবার আমার ছোট মেয়ে ফারিহার জন্যও সাফা পছন্দ করে জামা কিনেছে। শুধু জামা না, মেকআপ, কসমেটিকস ও জুতা সাফা দেখে দেখে কিনেছে সবার জন্য। ও পরাবে, নিজেও পরবে। এখন এগুলোর কী হবে? কে পরবে নতুন জামা-জুতা? ঈদে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’

দুর্ঘটনার সময় বাসে ডান পাশে বাবার কোলে ঘুমিয়ে ছিল চার মাসের শিশু ফারিহা। পরিবারের এই দুজন সুস্থ রয়েছে। আর বাঁ পাশে সাদিয়া তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন। জানালার পাশে ছিল মেজ মেয়ে সামিয়া।

সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘বাস শুধু কাঁপছিল আর কাঁপছিল। পাড়াপাড়ি (ওভারটেকিং) কাকে বলে! জোরে চালানো দেখে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। ড্রাইভারকে অনেকেই আস্তে চালাতে বলছিলেন। কিন্তু, তিনি কারও কথা শোনেননি। পাড়াপাড়ি করে সব গাড়িকে পেছনে রেখে আগে যাচ্ছিলেন ড্রাইভার। ওর কী লাভ ছিল, ও-ই জানে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন