হোম অন্যান্যশিক্ষা চেয়ারম্যান মন্ত্রীর ও কমিশনারের পদমর্যাদা বিচারপতির

চেয়ারম্যান মন্ত্রীর ও কমিশনারের পদমর্যাদা বিচারপতির

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 52 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিলুপ্ত করে “বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন” গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দেওয়া, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে একক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে এই কমিশন গঠন করা হবে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় “বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন অধ্যাদেশ–২০২৫” এর খসড়া প্রকাশ করেছে। এতে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন রহিত করে বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন, ২০২৫ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ১০ ডিসেম্বর খসড়াটি প্রকাশ করে। পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামত দেওয়ার জন্য এটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীন ও সক্ষম সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে দাঁড় করাতেই উচ্চশিক্ষা কমিশন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। উচ্চশিক্ষা কমিশন কার্যকর হলে রাষ্ট্রপতি সরাসরি কমিশনকে অর্থ বরাদ্দ দেবেন। ফলে কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে সক্ষম হবে।

খসড়া অনুযায়ী, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ওপর উচ্চশিক্ষা কমিশনকে আর নির্ভর করতে হবে না।

খসড়া উচ্চশিক্ষা কমিশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কমিশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন। আর কমিশনাররা পাবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপরের পদে থাকবেন উচ্চশিক্ষা কমিশনের কমিশনাররা। বিদ্যমান ব্যবস্থার তুলনায় পদমর্যাদা বাড়ানো হয়েছে অধ্যাদেশে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদমর্যাদা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ইউজিসিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় কম। বিদ্যমান ব্যবস্থায় টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। গবেষণা কিংবা শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে না। বাজেট অনুযায়ী বরাদ্দ পেতে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়, কিন্তু বাস্তবে তা পাওয়া যায় না। খসড়া অধ্যাদেশে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরাসরি রাষ্ট্রপতি বরাদ্দ দেবেন।”

কমিশন প্রতিষ্ঠা

অধ্যাদেশ জারি হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিলুপ্ত হবে এবং এর স্থলে বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। কমিশন একটি একক সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। কমিশন স্থাবর ও অস্থাবর উভয় ধরনের সম্পত্তি অর্জন, অধিকারে রাখা ও হস্তান্তর করতে পারবে। কমিশনের নিজস্ব পতাকা থাকবে। কমিশন স্বীয় নামে মামলা দায়ের করতে পারবে এবং কমিশনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।

কমিশনের কার্যালয়

কমিশনের কার্যালয় ঢাকায় থাকবে। প্রয়োজনে বিভাগীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা যাবে। তবে প্রধান কার্যালয় ঢাকাতেই থাকবে।

কমিশন গঠন

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, একজন চেয়ারম্যান, আটজন কমিশনার এবং ১০ জন খণ্ডকালীন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত হবে। চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ পাবেন।

খণ্ডকালীন সদস্য

খণ্ডকালীন সদস্য হবেন সরকার মনোনীত তিনজন— শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য এবং সচিব পদমর্যাদার নিচে নন এমন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি।

এছাড়া কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে মনোনীত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্য থেকে তিনজন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সনদপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্য থেকে দুইজন এবং যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খণ্ডকালীন সদস্য মনোনীত হননি, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রথিতযশা অধ্যাপকদের মধ্য থেকে কমিশন মনোনীত দুইজন অধ্যাপক থাকবেন।

নিয়োগ ও পদমর্যাদা

সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্ধারিত শর্তে চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা চার বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ পাবেন। তারা প্রত্যেকে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নিয়োগের জন্য বিবেচিত হতে পারবেন।

চেয়ারম্যান হতে হলে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান পিএইচডিধারী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার কমপক্ষে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে অধ্যাপক হিসেবে ন্যূনতম ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

চেয়ারম্যান ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমপর্যায়ের পদমর্যাদা পাবেন, তবে তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রী হবেন না। সে অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

চেয়ারম্যান কমিশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তার অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতম কমিশনার সাময়িকভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

কমিশনার হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে অধ্যাপক হিসেবে ন্যূনতম ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কমিশনাররা আপিল বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদা পাবেন।

কমিশনাররা চেয়ারম্যানের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তার কাছে জবাবদিহি করবেন।

সরকার ও কমিশন মনোনীত খণ্ডকালীন সদস্যরা দুই বছর মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন। তবে যারা যে পদ বা প্রতিষ্ঠান থেকে মনোনীত হয়েছেন, সেখানে কর্মরত না থাকলে তারা আর খণ্ডকালীন সদস্য থাকবেন না।

সার্চ কমিটি

চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সভাপতি হবেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।

অন্য দুই সদস্য হবেন প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে একজন এবং জাতীয় অধ্যাপক বা প্রাক্তন জাতীয় অধ্যাপক একজন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন