আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির মুখোমুখি ভেনেজুয়েলা প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া, চীন এবং ইরানের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো রাডার সিস্টেম, বিমান মেরামত এবং সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের জন্য দেশগুলোর সহায়তা চাইছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর প্রতি এই আবেদনগুলো ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে লেখা একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাদুরোর একজন জ্যেষ্ঠ সহকারীর মস্কো সফরের সময় চিঠিটি পৌঁছে দেন।
নথির বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় বর্ধিত সামরিক সহযোগিতা’ চেয়ে মাদুরো চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছেও একটি চিঠি পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেছেন।
ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য চীনা সংস্থাগুলোর রাডার সনাক্তকরণ ব্যবস্থার উৎপাদন ত্বরান্বিত করার জন্য মাদুরো বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, ‘চিঠিতে মাদুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসনের তীব্রতার ওপর জোর দিয়েছেন এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপকে তাদের অভিন্ন আদর্শের কারণে চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।’
নথিতে বলা হয়েছে, পরিবহন মন্ত্রী র্যামন সেলেস্টিনো ভেলাস্কেজ ইরান থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক সরঞ্জাম এবং ড্রোনের একটি চালানের ব্যবস্থা করেছেন। তেহরানে তার একটি সফরের কথাও নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুসারে, ভেলাস্কেজ একজন ইরানি কর্মকর্তাকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ‘প্যাসিভ ডিটেকশন সরঞ্জাম’, ‘জিপিএস স্ক্র্যাম্বলার’ এবং ১০০০ কিলোমিটার পাল্লার ড্রোন প্রয়োজন।
২০১৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি মাদুরোর জন্য সবচেয়ে ‘গুরুতর পরীক্ষার’ একটি। গত সেপ্টেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলার জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসা তথাকথিত মাদক পাচারকারী জাহাজগুলোতে এক ডজনেরও বেশি হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে কমপক্ষে ৬১ জন নিহত হয়েছে।
মাদক পাচারের দাবির সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেনি। অন্যদিকে, মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অক্টোবরের গোড়ার দিকে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফোনালাপে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ‘ক্যারিবিয়ান সাগরে ওয়াশিংটনের তৎপরতার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিলেন।
গত বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মস্কো ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বিষয়টি পরিচালনা করা উচিত বলে মনে করে।
রাশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভেনেজুয়েলার পরিবহনমন্ত্রী ভেলাস্কেজ রুশ পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কো সফর করেন। সংবাদপত্রের প্রাপ্ত নথি থেকে জানা যায়, পুতিনের কাছে মাদুরোর চিঠি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও তাকে দেওয়া হয়েছিল।
বার্তায় মাদুরো রাশিয়ার কাছে ভেনেজুয়েলার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সাহায্য চেয়েছেন – যার মধ্যে বেশ কয়েকটি সুখোই সু-২০এমকে২ বিমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি রাশিয়ায় আটটি ইঞ্জিন এবং পাঁচটি রাডার মেরামত, রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ এবং অনির্দিষ্ট ‘লজিস্টিক সহায়তা’র জন্য সহায়তা চেয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেনেজুয়েলার অস্ত্রাগারের বেশিরভাগই পুরনো অথবা অকার্যকর। ভেনেজুয়েলার একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৮ সাল নাগাদ মাত্র পাঁচটিরও কম রাশিয়ান তৈরি সুখোই জেট বিমান কার্যকর ছিল।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, হুগো শ্যাভেজ রাশিয়ান হেলিকপ্টার এবং ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছেন, কিন্তু বেশিরভাগই পুরনো এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব একটা হুমকি নয়।
তবে গত মাসে মাদুরো দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলা দেশব্যাপী ৫০০০ রাশিয়ান-নির্মিত ইগলা-এস পোর্টেবল বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
