আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের গাজা শহরটির দখল ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পরিকল্পিত স্থল অভিযানের প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাতা থেকে পালাচ্ছে মানুষ। গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পিত স্থল আক্রমণের অংশ হিসেবে বুধবার (২০ আগস্ট) তীব্র বোমাবর্ষণ ও আর্টিলারি হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। এরপর শহরের উপকণ্ঠে ঘাঁটি স্থাপন করেছে তারা। এ শহরে এক ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন সাংবাদিকদের জানান, আমরা গাজা সিটিতে প্রাথমিক অভিযান এবং আক্রমণের প্রথম ধাপ শুরু করেছি।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও বলেন, সেনারা এরইমধ্যে জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
শহরের জেইতুন ও সাবরা পাড়ার শত শত বাসিন্দা শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ আক্রমণ অবশ্যম্ভাবীভাবে মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে আনবে।’
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনা উপেক্ষা করে পুরো গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় অটল রয়েছে—এ বার্তাই দিতে চাইছে।
মঙ্গলবার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনার অনুমোদন দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
এ অভিযানে অংশ নিতে আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুতে ৬০ হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হচ্ছে। তাঁদের রণাঙ্গনে লড়াইরত সেনাদের পরিবর্তে মোতায়েন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি গাজায় শেষ সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো দখলের সময়সীমা কম করছেন।
অন্যদিকে হামাস এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, নেতানিয়াহু নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধ চালাচ্ছেন এবং আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে উপেক্ষা করছেন। ইসরায়েল এখনও সেই প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেয়নি।
গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েল এগিয়ে নিতে থাকায় সেখানকার লাখো বাসিন্দাকে দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের অনেক মিত্র গাজা সিটি দখলের এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল বুধবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করে বলেছেন, এ পরিকল্পনা ‘দুই জাতির জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং গোটা অঞ্চলকে স্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।’
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) বলেছে, নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ও সহিংসতা বেড়ে গেলে গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির পরোক্ষ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকা দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন আরও বলেন, জেইতুন এলাকায় দুটি ব্রিগেড ও জাবালিয়ায় আরেকটি ব্রিগেড অভিযান চালাচ্ছে। তার দাবি, জেইতুনে সাম্প্রতিক অভিযানে অস্ত্রভর্তি একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গও শনাক্ত করা হয়েছে।
ডেফরিন বলেন, বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গাজা সিটির বাসিন্দাদের আগে থেকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল এএফপিকে বলেছেন, জেইতুন ও সাবরা এলাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ংকর ও অসহনীয়। বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
ডেফরিন দাবি করেন, গাজায় এখনো ৫০ জন জিম্মি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
তবে জিম্মিদের পরিবারগুলোর আশঙ্কা, স্থল অভিযানে তাদের জীবন হুমকিতে পড়তে পারে।