রাজনীতি ডেস্ক:
নৌকার বাইরে গিয়ে কেউ কোনও কথা বললে ‘গলা নামিয়ে দেয়ার’ হুমকি দেয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ (রাজৈর-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খানকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে।
নোটিশে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনের অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল) আদালতের বিচারক মো. শরিফুল হকের কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের বিচারকের স্বাক্ষরিত চিঠিটি শুক্রবার আসিবুর রহমান খানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার আসিবুর রহমান খানের প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে মাদারীপুর সদরের খোঁয়াজপুরের টেকেরহাটে নির্বাচনের প্রচারণায় যান মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, নৌকার প্রার্থী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। শাজাহান খানের ছেলে মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের পক্ষে নৌকায় ভোট চান। সদর উপজেলার খোঁয়াজপুর টেকেরহাট সংসদীয় মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে।
ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে আসিবুর রহমান খান বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে এই টেকেরহাটে এসেছিলাম নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করতে। আমাদের প্রিয় মুখ মাদারীপুর-০৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপ মিয়ার (চাচার) স্বপক্ষে কাজ করার জন্য। কিন্তু একদল সন্ত্রাসী চেষ্টা করেছে এখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে এই টেকেরহাটকে নষ্ট করার পায়তারা চালাচ্ছে।
এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বক্তব্যে আরও বলেন, যারা এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তাদের কঠোরভাবে জানাতে চাই, আমরা এখনও ঠান্ডা আছি, তাই ঠান্ডা থাকতে দেন। যদি একবারও মাথা গরম করি, তাহলে আপনি (এক আওয়ামী লীগ নেতার উদ্দেশ্যে বলেন) মাদারীপুর কেন, বাংলাদেশেও থাকতে পারবেন না।
শাজাহান খানের বড় ছেলে বক্তব্যে আরও বলেন, আমাদের এক কর্মীকে ষড়যন্ত্রকারীরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছে। এই টেকেরহাটে যদি কোন রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, নৌকার বাইরে যদি একজনও কোন রকম কথা বলে, এমনকি গলা উঁচু করে কথা বলার চেষ্টা করে, তাহলে আপনাদের গলা কিভাবে আমরা নামাবো, সেটা আমরা ভাল করেই জানি। এখন সাবধান করে গেলাম, এরপর সামনে আমরা কঠোরভাবে আসবো।
ভাইরাল হওয়া এ বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে নজরে আসে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খানের। পরে তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নান্নী খানকে বিষয়টি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। পরে নান্নী খান নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠান।
এ সম্পর্কে সহকারী রিটার্নিং ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নান্নী খান বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (আসিবুর রহমান খান) মাদারীপুর-৩ আসনে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে ভিডিও চিত্রের সিডিসহ তথ্য প্রমাণ পাঠানো হয়েছে। তিনি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’