শিক্ষা ডেস্ক:
গত ৯ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বহিরাগত নারীকে শারীরিক হেনস্তার ১০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। যার সব ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও অধিকাংশই সময়েই পার পেয়ে যায় অভিযুক্তরা।
২০১৫ সালের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে ছাত্রলীগের হাতে এক দর্শনার্থী সস্ত্রীক লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
একই বছর পয়লা বৈশাখের দিন আদিবাসী এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা, ছিনতাই ও মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। এ ছাড়া ৬ মার্চ দোল উৎসবে একজন ছাত্রীর গায়ে রঙ দেয়ার দায়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে তিন মাসের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত এক নারীকে ইভটিজিংয়ে বাধা দেয়ায় এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত ও এক সংবাদকর্মীকে মারধরের অভিযোগে ছাত্রলীগের পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
একই বছরের নভেম্বরে এক শিক্ষার্থী ও তার বান্ধবীর কাছে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় মারধর ও ধর্ষণের হুমকি দিয়ে কানের দুল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের তিন জনকে আজীবন এবং দু’জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
ওই বছরের জুনে বহিরাগত এক ব্যক্তি ও তার বান্ধবীর মোবাইলফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় তিন জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনে হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন। ওইদিন ছাত্রলীগের এমন কাজকে গণঅভ্যুত্থান হিসেবে ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
২০২২ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও আরেক নারী শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগপত্র দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
২০২৩ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের শিকার হন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক সহকারী অধ্যাপক। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের দায় সংগঠন নেবে না বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় এরই মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ধর্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই। এই ধরনের ঘটনার যেনো পুনরাবৃত্তি না হয় তাই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাই।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনের সনদ স্থগিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছে। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া ঘটনার তদন্তে চার সদস্যদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।