হোম অন্যান্যলিড নিউজ খুলনায় গুলি ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ৪, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১০ বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

খুলনায় গুলি ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ৪, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১০ বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 113 ভিউজ

খুলনা অফিস :

খুলনায় জাকারিয়া বাহিনীর গুলিতে আহত সাইফুল ইসলাম (২২) নামে আরো একজনের মৃত্য হয়েছে। এছাড়া ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে জিহাদ শেখ (৩৫) নামে জাকারিয়া বাহিনীর একজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪জনে। নগরীর খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী গ্রামের ইস্টার্ন গেট এলাকায় এ গোলাগুলি ও গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। বর্তমানে মশিয়ালী গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শুক্রবার দুপুরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঘাতক জাকারিয়া, কবির, জাফরিন ও মিল্টনের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করে। বর্তমানে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ জাকারিয়া হাসানকে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জাকারিয়া বাহিনীর গুলিতে মশিয়ালী গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম (৬০) ও একই গ্রামের গোলাম রসুল (৩০) নিহত হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ ৮-১০জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সাইফুল ইসলাম (২২) বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার মারা যায়। এদিকে, তিনজনকে হত্যার পর রাত ২টার দিকে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে জাকারিয়া বাহিনীর সদস্য জিহাদ শেখ (৩০) নামে একজন নিহত হয়।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মুজিবর নামে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অস্ত্রসহ খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া এবং তার ভাই খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জাফরিন ও মিল্টন পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। মুজিবরের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে এলাকাবাসী জাকারিয়ার কাছে যায়। তার বাড়ির সামনে যাওয়ার পর কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে জাকারিয়া, জাফরিন কবির ও মিল্টন তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।

এ সময় গুলিতে নজরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, সাইফুল ইসলাম, শামীম, রবি, সুজন, রানা ও খলিল সহ ৮-১০জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুল ইসলাম ও গোলাম রসুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাইফুল ইসলাম মারা যায়।

এ ঘটনার পর রাত ২টার দিকে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়ার সহযোগী জাহিদ শেখ মারা যায়। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সেলিম রেজা জানান, মৃত অবস্থায় জাহিদ শেখকে হাসপাতালে আনা হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, মশিয়ালী পূর্বপাড়া মসজিদ কমিটির নির্বাচনে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক মো. জাকারিয়া সভাপতি পদে প্রার্থী হন। শুক্রবার সেই নির্বাচনের দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু জাকারিয়া মাদক ও সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রামবাসী তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামবাসীর ওপর তারা চার ভাই অতর্কিতে গুলি চালায়।

এতে নজরুল ইসলাম, গোলাম রসুল ও সাইফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী দফায়-দফায় বিক্ষোভ করে। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসী আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া, জাফরিন, কবির ও মিল্টন এই চার ভাইয়ের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি উত্তেজিত গ্রামবাসী।

রাত ২টার দিকে গ্রামবাসী আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়ার সহযোগী জিহাদ শেখকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন বলেন, গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে জাকারিয়াকে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের পদ থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই বহিস্কার করা হয়েছে।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মশিয়ালী গ্রামের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। নিহতদের মরদেহ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার জানান, মশিয়ালীতে গোলাগুলির ঘটনায় মোট চারজন নিহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

সহকারী পুলিশ কমিশনার (দৌলতপুর জোন) বায়জিদ হোসেন জানান, তিনি আসামিদের ধরতে যশোরের অভয়নগরে অভিযানে রয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন