‘৮ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘২০১৮ সালের এই দিনে প্রতিহিংসাপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ১/১১ এর জরুরি অবস্থায় সরকারের বিরাজনীতিকরণের মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে আটক রেখেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুধু ফরমায়েশি সাজা দিয়ে তাঁকে আটক রাখা হয়নি, তাঁর প্রাপ্য জামিনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি রেখেছিল। বন্দি থাকা অবস্থায় সুচিকিৎসার অভাবে তার অসুস্থতা আরও তীব্র হয় এবং তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়ে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনকেও দমন করতে সরকার নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। দেশ-বিদেশে সর্বত্র বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সোচ্চার হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইনগতভাবে বারবার তার (খালেদা জিয়া) জামিনের আবেদন করা হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে জামিন দেওয়া হয়নি। আইনি লড়াই করতে বিদেশ থেকে আইনজীবী আসতে চাইলেও সরকারের আপত্তির কারণে তাকে আসতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শর্তসাপেক্ষে সরকার তাঁর সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে তাঁকে প্রকারান্তরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁর উন্নত, উপযুক্ত সুচিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাঁকে বিদেশে উন্নত বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুপারিশ করলেও সরকার তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব ঘটনায় দিবালোকের মতো সত্য প্রমাণিত হয় যে, সরকারের অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী, আইন পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটের নামে প্রহসন নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে ফ্যাসিবাদী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই ফরমায়েশি সাজা দিয়ে, তাঁর সব আইনগত অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁকে আটক করে রেখেছে। অপরাধ না করেও ফ্যাসিবাদী সরকার খালেদা জিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন ও জনমতকে বিভ্রান্ত করতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কিন্তু জনগণ জানেন এবং বিশ্বাস করেন, তাদের প্রিয় নেত্রী কোনো অপরাধ করেননি। শুধু সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নির্মম, নিষ্ঠুর জুলুম নেমে এসেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কল্যাণে, অধিকার আদায়ে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরন্তরভাবে লড়াই করে চলেছেন। এজন্য জনগণ তাঁকে ‘দেশনেত্রী’, ‘আপসহীন নেত্রী’, ‘গণতন্ত্রের মাতা’ বলে অবিহিত করেন। খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণেই ৯০ এর দশকে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, রূপকারও ছিলেন তিনি। স্বৈরাচারের পতনের পর তাঁর হাত ধরেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের নবযাত্রা শুরু হয়েছে। ৯০ পরবর্তী অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের বিপুল রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তিনি স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তূপের ওপর আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই ওই সময় বিশ্বে বাংলাদেশ ‘ইমার্জিং টাইগার’ অর্থাৎ ‘উদীয়মান বাঘ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্দি রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে গণতন্ত্রকে বন্দি রেখেছে। খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র আজ যেন সমার্থক। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে। গণতন্ত্রের মুক্তি হলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। জনগণ আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে অবতীর্ণ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সন্নিবেশিত করে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুম, নির্মম নির্যাতন হয়েছে। তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমি সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের এই নির্মম নির্যাতনের তীব্র ধিক্কার জানাই। সরকারের অন্যায় চাপ ও অগণতান্ত্রিক কাজের প্রতি মাথা নত করেননি, আপস করেননি। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন সরকার ভয় পায়। এজন্যই তাঁর ওপর এত জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সাহসের বাতিঘর।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।