হোম ফিচার খাবারের কষ্টে পরিবহন শ্রমিকরা

খাবারের কষ্টে পরিবহন শ্রমিকরা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 133 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

‘স্যার টাকা আছে কিন্তু খাবার কিনুম কই, সব তো বন্ধ। মেসের থেকে ১০ জনের খাবার রান্না করে আনলে ৩০ জন মিলা খাই’— এভাবেই কষ্টের কথা এই প্রতিবেদকের কাছে জানান পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবহন পাহারা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত থাকায় তাদের আপাতত বাসস্থান বাসের ভিতরেই। এখানেই তারা আড্ডা দিয়ে গল্প করে কিংবা ঘুমিয়ে দিন কাটান।

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ আছে। এই মুহূর্তে পরিবহন খাতের বেশিরভাগ শ্রমিক যার যার বাড়িতে অবস্থান করলেও কিছু শ্রমিক নিয়োজিত আছেন পরিবহন পাহারা দেওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে। দেশের বিভিন্ন টার্মিনালে অবস্থান করলেও অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

প্রতিদিনের খাবারের টাকা মালিক দিলেও সেই টাকা দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছে না। সব হোটেল দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে আছেন তারা। রাজধানীর গাবতলি বাস টার্মিনালে এমন কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের নির্দেশে পরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই রাজধানীর গাবতলি বাস টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালেই অনেক গাড়ি পার্কিং করা। এসব গাড়ির নিরাপত্তার জন্য হেল্পার কিংবা কন্ডাক্টরকে নিয়োজিত করেছেন মালিকরা।

বিনিময় তারা প্রতিদিনই বেতন এবং খাবার খরচ পাচ্ছেন। কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় খাবারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। আবার যাদের থাকার জায়গা আছে তাদের বাসা টার্মিনাল থেকে অনেক দূরে। তাই রান্নার ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না।

গাবতলি বাস টার্মিনালে অপেক্ষমাণ রোজিনা পরিবহনের কর্মী দীপঙ্কর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৫ তারিখ থেকে গাড়ি বন্ধ। আমরা কয়েকজন আছি গাড়ির নিরাপত্তার জন্য। কোনও গাড়িতে ২ জন আবার কোনও গাড়িতে ১ জন আছে। মালিক টাকা দেয় খাবারের জন্য , কিন্তু খাবার কিনমু কোথায়। দোকান তো সব বন্ধ, হোটেল খোলা নাই। আর মালিকও তো এখন আসতে পারবে না খাবার নিয়ে।’

এই টার্মিনালের অপর এক পরিবহন কর্মী বলেন, ‘খাবারের কষ্ট অনেকদিন ধরেই। হোটেল খোলা থাকলে এই সমস্যা হইতো না। এখন আমরা অনেক দূর থেইক্কা রান্না কইরা আনি। তাও সবার হয় না। মেসের থেইক্কা খাবার আনে ১০ জনের, খাই ৩০ জন মিল্লা।’

এদিকে বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো গণপরিবহন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। পরিবহন সেক্টরে নিয়োজিত চালক-শ্রমিকরা লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দিন যাবত কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে।

যারা দৈনিক বেতনত্তিক কাজ করে থাকে তারা দীর্ঘদিন ধরে আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশের ইতিহাসের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে অসহায় শ্রমিক পরিবারগুলার প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানোর একান্ত জরুরি। এই সময় শ্রমিকদের পাশে মালিকদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

শ্রমিকদের এই দুর্দশায় করণীয় কী জানতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেসব শ্রমিক এখন পাহারা দিচ্ছে এই লকডাউনের মধ্যে মালিকদের পক্ষে খাবার সরবরাহ করা কিছুটা কঠিন। তারা কিন্তু টাকা দিয়ে দিচ্ছে।

আমি আমার কোম্পানির শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন জেলায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। অনেক মালিকই এরকম টাকা দিয়েছে। কেউ কেউ টাকা দিচ্ছে না, তাদের আমরা আবার একটা নির্দেশনা পাঠিয়েছি। তারপরও মালিকরা যেন এই দুঃসময়ে শ্রমিকদের খাবারের বিষয়ে সহায়তা করতে পারে আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন