হোম ফিচার ক্ষুদে ডাক্তারের পরীক্ষায় চোখের সমস্যা ধরা পড়ল ৪৪ শিক্ষার্থীর

অনলাইন ডেস্ক:

দেয়ালে টাঙানো চক্ষু পরীক্ষার ভিজ্যুয়াল একিউটি চার্ট। বেঞ্চে বসা স্কুল শিক্ষার্থী। সাদা অ্যাপ্রন পরিহিত একজন ডাক্তার হাতে থাকা স্কেল দিয়ে একিউটি চার্টের বিভিন্ন অক্ষর দেখিয়ে পরীক্ষা করছেন শিক্ষার্থীর চোখের দৃষ্টিশক্তি।

এভাবেই ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ৪৪ রোগী শনাক্ত করেছে ডাক্তার। তবে তারা ডিগ্রিধারী কোনো চক্ষু ডাক্তার নয়! তারা সকলে ক্ষুদে ডাক্তার এবং স্কুলের শিক্ষার্থী। একইভাবে ক্ষুদে ডাক্তারদের কেউ কেউ ওজন পরিমাপক যন্ত্রে শিক্ষার্থীদের ওজন মাপছে। কেউ আবার উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্য নিরুপণ করছেন উচ্চতা। এমন কার্যক্রমের দেখা মিলেছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের আওতায় এ উপজেলায় গত ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী এ কার্যক্রম চালিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ২৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহব্যাপী চলেছে এ কার্যক্রম। এতে ওই সব প্রতিষ্ঠানের ৩১ হাজার ৭৫৭ শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবান কিনা! তা যাচাই করা হয়েছে।

দেশব্যাপী বছরে দুবার উপজেলাব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালানো হয় ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম। এবারের কার্যক্রমে ক্ষুদে ডাক্তাররা ৪৪ শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে। যাদের সবাই ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। এদের মধ্যে ১৯ ছাত্র এবং ২৫ ছাত্রী।

এ প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদে ডাক্তাররা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্চা, কৃমিনাশক ওষুধ সেবন এবং প্রতিমাসে দুবার শ্রেণিকক্ষে ফ্লিপচার্ট থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবার্তা পড়ে শোনায়। এতে করে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে অংশ গ্রহণ করে ক্ষুদে ডাক্তাররা।

এমনই এক ক্ষুদে ডাক্তার তানিয়া আক্তার। সে ঘোড়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এ ক্ষুদে ডাক্তার বলে, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার অনেক কিছু আমি শিখেছি। এখন আমার অন্য সহপাঠীদের স্বাস্থ্য সচেতন করছি। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে এবং স্বাস্থ্যবান হতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করছি।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাছুদা বেগম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর যাবত আমাদের বিদ্যালয়ে ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম চলছে। এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্য সচেতনতার শিক্ষা পাচ্ছে। আমরা শিক্ষকরা ক্ষুদে ডাক্তারদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি।’

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়ভিত্তিক এ ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম। বর্তমানে সরকারের এ উদ্যোগটি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুদে ডাক্তারের মাধ্যমে শনাক্ত হওয়া ৪৪ ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষার্থী অভিভাবককে আমরা তাদের সন্তানদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। পাশাপাশি আমরা তাদের চোখের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন