পরেশ দেবনাথ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি :
কেশবপুরে পাট চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে খুশি হলেও বাজার দর কম হওয়ায় বেশ খানিকটা হতাশ হয়েছেন কৃষকরা। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এবার পাটের আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তারা। পাট কাটা মূহুর্তে বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তিত থাকলেও বর্তমান পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাট পচনের জন্য নেই আর কোন সমস্যা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ মাহমুদা আক্তার বলেন, কেশবপুরে চলতি বছর ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ১০ হেক্টর। এ বছর ৯০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ২.৯ মেঃ টন এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৯০ মেঃ টন। এবার জেআরও ৫২৪ জাতের ৪ হাজার ৬’শ হেক্টর, রবি-১ জাতের ৪৯৫ হেক্টর ও গুটি/দেশি পাট ৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছেন কৃষকরা। তিনি আরও জানান, এবছর ৩ হাজার ৭’শ ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষিদের মাঝে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে রবি-১ জাতের এক কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ড্যাব সার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার মঙ্গলকোট, বিদ্যানন্দকাটি, মজিদপুর, ত্রিমোহিণী, সাতবাড়িয়া, হাসানপুর, সাগরদাড়ি ইউনিয়ন ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। কেশবপুর এলাকায় ৯০ ভাগ কৃষক ইতিমধ্যে পাট কেটে ফেলেছেন। অনেকে আগাম পাট কেটে ধান লাগিয়েছেন।পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিলে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন কৃষকরা। অনেকে স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পাট জাগ দিয়েছিলেন। বৃষ্টির পানি না হওয়ায় জাগ দেওয়া, পাট এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে পাট জাগ দেওয়ায় খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পাট জাগ দিতে কৃষকদের আর সমস্যা না থাকায় ওই খরচের হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন।
মঙ্গলকোট গ্রামের আবুবক্কর দফাদার জানান, আমার ১৬/১৮ কাঠা পাট লাগানো, ধোয়াও হয়ে গেছে। পাটের বাজার ডাউন, যে কারণে এখন বিক্রি করলে আসল টাকা ঘরে আসবে না।
গোলদার পাড়ার আব্দুল জলিল গোলদার জানান, আমার ২ বিঘা জমিতে পাট লাগানো আছে। ১ বিঘা জমির পাট উঠানো হয়ে গেছে, আর ১ বিঘার পাট পানিত আছে। পাট জাগ দেওয়ার আগে সমস্যা ছিল এখন আর সসস্যা নেই।
মঙ্গলকোট বাজারের পাট ব্যবসায়ী ও মঙ্গলকোট বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন সরদার জানান, পাট বাজারে আমদানি ভাল কিন্তু বাজার কম থাকায় কৃষক পাট বিক্রি করতে চাচ্ছে না। ভাল পাট ১৬’শ ৮০ টাকা থেকে ১৭’শ এবং কমা পাট ১৫ ‘শ টাকায় কিনছি কিন্তু বেচতে পারছি না, কোন গাড়ি লোড হচ্ছে না। পাট বিক্রি করে তাদের আসল টাকা বাঁচতেছে না। কৃষকরাও খুব বিপর্যায়ে।
কৃষকরা তাদের পাটখড়ি ও পাট তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য বিভিন্ন স্কুল মাঠ, রাস্তার ধারে, রাস্তার ওপর নেড়ে দিচ্ছেন।