হোম খুলনাকুষ্টিয়া কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশের ৩ হাজার গাছ

কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশের ৩ হাজার গাছ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 62 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত রাস্তার পাশের ৩ হাজার গাছ কাটবে বন বিভাগ। গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নম্বর দিয়ে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন তারা। তবে, গাছ না কাটার দাবি তুলেছে স্থানীয় জনগণ।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।

সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার সড়কের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নম্বর দিয়ে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও পথচারীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। চাঁপড়া বোর্ড অফিস এলাকার খালের পাকা ও কাঁচা সড়কের দুপাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলোর গায়ে নম্বর বসানো।

ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি প্রায়ই সড়কে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেন। গাছগুলো কাটা হলে আর বসা হবেনা তার। তার ভাষ্য, ‘গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারে। অনেকেই বিশ্রাম নেন।’

কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোস্তাক শাহরিয়ার বলেন, তিন মাস আগেও সড়কের ধারে গাছগুলো ছিল চোখের সৌন্দর্য। বড় পুকুরের ওখানে ছায়াতলে মানুষ বিশ্রাম নিত। আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধু-ধু মরুভূমি, তীব্র দাবদাহ। অল্প কিছু টাকার জন্য সরকার যেন আর গাছ না কাটে।

আলিমুজ্জামান রাজিব নামের আরেক ছাত্র বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের ছায়া দিচ্ছে। সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে। সেহেতু গাছগুলো না কাটাই ভালো। তর ভাষ্য, গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে। তিনি গাছ না কাটার দাবি জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চাকরিজীবী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গাছগুলো যেহেতু সড়ক নির্মাণ ও চলাচলে সমস্যা করছে না। সেহেতু শুধু টাকার জন্য কেন কাটা হবে? নির্বিচারে গাছ কাটার কারণেই প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি গাছ রক্ষার দাবি জানান।

কুমারখালী উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ-সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করেন। গাছ দেখাশোনা করেন সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়, তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বনবিভাগ। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পান সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পায় ৫ ভাগ। আর বনবিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ পায় ২০ ভাগ করে।

জনগণের গাছ রক্ষার দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক মঞ্জু। তার মতে, সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ছায়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছগুলো থাকা দরকার। তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়লে মানুষের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের ক্ষতি হবে। সেগুলো কাটার কথাও জানান তিনি।

পরিবেশ নিয়ে প্রায় ৪১ বছর ধরে গবেষণা করছেন গবেষক গৌতম কুমার রায়। তিনি জানান, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ আছে মাত্র ৯ ভাগের কম। তবুও প্রতিদিনই গাছ উজাড় হচ্ছে। যে মুহূর্তে প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে। পানির মহা সংকট চলছে। মানুষ গরমে নাভিশ্বাস করছে। পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছেনা। সেই মুহূর্তে গাছগুলো কাটার ঘটনা সত্যি অদ্ভুত ও দুঃখজনক বটেই। তার ভাষ্য, ‘আমরা উন্মাদ জাতি। যে উন্মাদ মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা শুধু ধ্বংসকেই আনন্দের সাথে গ্রহণ করি। সৃষ্টিকে না।’

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ১০ বছর পূর্ণ হলেই সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ কেটে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করা হয়। এরইমধ্যে ওই সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। অন্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কাটা হবে। তার ভাষ্য, ‘গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই।’

যেহেতু তাপদাহ চলছে, সেহেতু এই মুহূর্তে গাছগুলো থাকাই ভালো বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, বনবিভাগের সঙ্গে আলাপ করে বিধিমতে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন