হোম ফিচার কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতক নিতে হাসপাতালে মানিক-লাকি দম্পতি

স্বাস্থ্য ডেস্ক :

কুমিল্লায় ধান ক্ষেতে কুড়িয়ে পাওয়া নাক ও মাথায় ক্ষত সেই নবজাতকের (মেয়ে) শারীরিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতরাতে কুমিল্লা থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে নবজাতক বিভাগের এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (২৫ জুলাই) নবজাতকটির শারীরিক অবস্থার সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিষা ব্যানার্জি বলেন, ‘নবজাতকটির নাক, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। এনআইসিইউতে রেখে শিশুটিকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

ওই নবজাতক উদ্ধারের পর থেকে সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকা কুমিল্লার মানিক মিয়া ও লাকি আক্তার দম্পতি তাকে দত্তক নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ৪ ছেলের পর এ মেয়ে শিশুটিকে তাদের সন্তানের মতো লালন-পালন করতে চান তারা। তবে হাসপাতাল থেকে শিশু দত্তক নেয়ার নিয়মকানুন জানান পর চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার গাগুটিয়া ইউনিয়নের দড়িচর গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া ও লাকি আক্তার। এলাকার বাজারে মানিকের টেলিকমের দোকান রয়েছে। আর তার স্ত্রী গৃহিণী। মাহিদুল, জাহিদুল, সামিদুল ও সালমান নামে ৪ ছেলে রয়েছে তাদের। বড় দুই ছেলে অটোরিকশা চালক।

মানিক মিয়া জানান, গত শুক্রবার সকালে তার চাচাতো ভাই আমিরুল ইসলাম বাড়ির পাশে ক্ষেতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ধানক্ষেত থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পান। এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান ক্ষেতের মাটিতে নবজাতকটি পড়ে আছে। দৌঁড়ে গিয়ে বাড়িতে খবর দিলে বাড়ির নারী এসে ক্ষেত থেকে নবজাতকটিকে তুলে আনেন। নবজাতকের নাকটা ইঁদুর বা কোনো পোকামাকড়ে খেয়ে ফেলেছে। তার মাথার পেছনের চামড়াও খেয়ে ফেলেছে। উদ্ধারের পর দ্রুত তাকে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিল। তবে তার অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন।

তিনি বলেন, চার ছেলে সন্তান থাকলেও মেয়ে সন্তানের ইচ্ছা আমাদের বহুদিনের। নবজাতকটি পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা স্বামী-স্ত্রী এক মুহূর্তের জন্যও অন্য কোথাও সময় ব্যয় করিনি। ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালেই আছি। শিশুটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকে পুলিশ, উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। তবে শিশুটির চিকিৎসার জন্য গতকাল পর্যন্ত কেউ কোনো সহায়তা করেননি। চিকিৎসার সব খরচ আমরাই বহন করেছি। গতকাল ঢাকায় আসার আগে এলাকার লোকজন শিশুটির চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে আমাদের হাতে। এখন ঢাকা মেডিকেলে আসার পর এখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ হলেও শিশুটি আমাদের কাছে দেয়া হবে না। তাকে নিতে হলে আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মানিক মিয়া বলেন, আমরা না দেখলে বা উদ্ধার না করলে হয়ত সে বাঁচত না, এখন আমাদের বলছে আমাদের দিবে না। মামলা করে নিতে হবে। আমি তো সাধারণ মানুষ। আমাদের কেন ভোগান্তি পোহাইতে হবে। বাচ্চাটিকে যদি আমাদের দেয় আমার যতদূর সম্ভব ওর ভরনপোষণ করবো। আমার ৪ ছেলে যেভাবে বড় করেছি ওকেও সেভাবে পালবো। আমার বড় দুই ছেলে কাজ করে। তারা কি ছোট্ট বোনটাকে পালতে পারবে না!

তার স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, “যখন বাচ্চাটিকে পাওয়া যায় তখন অনেকেই তাকে দেখতে এসেছিল। ৩ এসেছিলেন তাকে পালনের দায়িত্ব নিতে। তবে তারা যখন দেখে বাচ্চাটি স্বাভাবিক না, তার নাক, মাথাসহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে তখন তারা ফিরে যায়। আমাদের কোনো মেয়ে নাই। আমরাই বাচ্চাটিকে নিজেদের সন্তানের মত পালতে চাই।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন