হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):
ডাক্তার অনন্যা রানীর ভুল অপারেশনে ফুলজান বিবি নামে এক বৃদ্ধা মহিলা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। প্রমাণ লোপাট করতে কৌশলে ক্লিনিকে ডেকে নিয়ে পরিচালক কাম মালিক মাসুম রোগীর ছাড়পত্র ও ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ জানুয়ারি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা চৌমুহনী কদমতলা মোড়ে অবস্থিত অনুমোদন বিহীন ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
এ ব্যাপারে ভুক্ত ভোগির পুত্র কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ভাঙ্গনমারী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ গাজীর পুত্র তৌহিদ ইসলাম বাদী হয়ে ওই দিনেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন, জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং অফিসার ইন চার্জ কালিগঞ্জ থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলো কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবির সভাপতি, সিভিল সার্জন অফিসের ডাঃ তামিম হাসান সদস্য ও কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাসান জাফুরি সদস্য।
নির্দেশ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত ১৯ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে ডাক্তার অনন্যা রানীকে না পেয়ে ফেরত আসেন। অভিযোগের সূুএ থেকে এবং নলতা গ্রামের হাফিজুর, আনিসুর, রফিক, তরিকুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনন্যা রানী কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরি করা কালীন প্রায় হাসপাতাল ফেলে নলতা চৌমুহনী অবস্থিত শেরে বাংলা ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়। সেখান থেকে তদবির করে আবারও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে কর্মরত আছে। যাতে করে বাড়ির কাছে থেকে নিজের ক্লিনিক দেখ ভালো করা যায়। তিনি চাকরিজীবী হওয়ায় বেসরকারি ক্লিনিক এন্ড হাসপাতাল করার বিধি বিধান না থাকলে তার একান্ত সহযোগী মাসুমের নামে কাগজপত্র তৈরি করে নিজে নেপথ্যে মালিক সেজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেন অনুমোদনের জন্য।
সেই সূত্রে গত ২০২৩ সালে শেষের দিকে নলতা চৌমুহনী কদম তলায় একটি তৃতীয় তলা বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে ইউনিক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর কার্যক্রম শুরু করেন। মূলত মাসুমের নামে কাগজপত্র থাকলেও ডাক্তার অনন্যা রানী প্রকৃত মালিক। ভুক্তভোগী ফুলজান বিবির পুত্র তহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান তার মা দীর্ঘদিন যাবত পেটের ব্যথায় ভুগছিল। সেই সুবাদ গত ২৭ জুলাই গ্রাম্য ডাক্তার দালাল নাসির এর মাধ্যমে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাঃ অনন্যা রানিকে দেখাতে গেলে তিনি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রথমে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। পরে ১৪ হাজার টাকা চুক্তিতে পেটে অপারেশন করে একটি টিউমার বাহির করে। অপারেশনের সময় টিউমারের কিছু অংশ ভিতরে রেখে সেলাই করে রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে নেওয়ার পরে কয়েক মাস মধ্যে আমার মা আবার অসুস্থ হয়ে পেট যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলে পুনরায় ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসলে তারা দেখতে অপরগতা প্রকাশ করে। তখন আমরা নিরুপায় হয়ে প্রথমে সাতক্ষীরা ডাঃ ফয়সাল, ডাঃ এস জেড আতিক ও ডাক্তার শরিফুল ইসলামের সরণাপন্ন হই । পরে খুলনা হার্ট ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে ২৩ ডিসেম্বর পুনরায় অপারেশন করালে তার পেট থেকে খন্ডিত টিউমারের অংশ পেটের ভিতর রেখে সেলাই দেওয়ায় পুনরায় ইনফেকশন হয়ে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানান। যে কারণে এখন রোগীকে বাঁচানো কষ্ট সাধ্য হয়েছে।
ডাক্তার অনন্যার ভুল অপারেশনে এ পর্যন্ত আমার ২ লক্ষাধিক টাকার অধিক খরচ করে গরু বাছুর সব বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমান আমার মা বাড়িতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। মানুষ টাকার জন্য যে কসাই হতে পারে এটা আমাদের ধারণা ছিল না। আমরা গরীব অসহায় ডাঃ অনন্যা এবং ক্লিনিক মালিক মাসুমের শাস্তি দাবি করছি। অভিযোগের খবর পেয়ে আমাদেরকে চিকিৎসা করানোর নামে তার ক্লিনিকে ডেকে নিয়ে মাসুম আমাদের কাছ থেকে কাগজপত্র দেখার নাম করে তার হাসপাতলের ছাড়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে লোপাট করে দেয়। যাতে করে আমরা কোথাও প্রমাণ না দেখাতে পারি। এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবির জানান তদন্তে যেয়ে ডাঃ অনন্যা রানীকে পাওয়া যায়নি তদন্ত কাজ চলমান।