হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন প্রকল্পের ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর গোমর ফাঁস সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়বুর রহমানের বিরুদ্ধে। এর আগেও তিনি দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে হাসপাতালের নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা সহ তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও,এস,ডি করা হয়েছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এবং বিধি ৪(২) (খ) অনুসারে ২ বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কর্ম পুঞ্জীভূত হারে স্থগিত করা হয়েছে। ডাঃ শেখ তৈয়বুর রহমান কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে তিনি হাসপাতাল টিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে যেমন খুশি তেমন ভাবে পরিচালিত করিতেন। কোন প্রকার নিয়ম নীতি কে তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন ও দৈনন্দিন কাজের জন্য বরাদ্দকৃত প্রকল্পের টাকা ভুয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে কালিগঞ্জ উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে উত্তোলন করে নিজে তা আত্মসাৎ করলেও একটি টাকার কোন কাজ বা মালামালের হদিস মেলেনী। তথ্য অনুসন্ধানে এমনই চিত্র উঠে এসেছে সাংবাদিকদের হাতে ।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের দেওয়া বিল মোতাবেক গত ২৩ জুন ২০২২ ইং সালের মার্চ মাসের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিষ্কার পরিছন্নতা মজুরি বাবদ ৪ হাজার টাকা ওই একই তারিখে এপ্রিল মাসের ৭ এপ্রিল হতে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মজুরি বাবদ ২৪ হাজার টাকা। মে মাসের ২১ তারিখ হতে ২৬ তারিখ পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মজুরি বাবদ ২৪ হাজার টাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অধীনে ধলবাড়িয়া ও বাঁশতলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ২০২২ সালের ১২ মাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ ২৪ হাজার টাকা। নলতা ও কুশুলিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১২ মাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মজুরী বাবদ ২৪ হাজার টাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়ি মেরামত বাবদ ২০২১ -২২ অর্থ বছরে মেরামত বিল বাবদ ২৫ হাজার টাকা। একই বছরে ১৯-৬-২০২২ ইং তারিখে আবারো গাড়ি মেরামত বাবদ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। ২০২১ -২২ অর্থ বছরে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভেজষ বাগানের নামে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করলেও একটি টাকারও গাছের সন্ধান মেলেনি। আল্লাহর দান বস্ত্রালয়ের ভুয়া ভাউচার মিহির ঘোষের নামে বানানো ভাউচার বিলে দেখা যায় উন্নত মানের তোয়ালেও ডাস্টার কেনা বাবদ ২৪ হাজার ৬০ টাকা দেখানো হলেও হাসপাতাল ঘুরে কোন তোয়ালে ও ডাস্টারের দেখা পাওয়া যায়নি। অনুরূপ একই নামে আরো একটি আল্লাহর দান বস্ত্রালয়ের ভাউচারে দরজা এবং জানালার পর্দা বাবদ ২৪ হাজার ৭২৫ টাকা উত্তোলন করলেও কোন দরজার পর্দা বা জানালা পর্দার সন্ধান মেলেনী।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার বুলবুল কবির সাংবাদিকদের জানান আমি এসে কোন দরজা জানালার বা ভেজষ গাছের খোঁজ পাইনি। আমি নিজের টাকা দিয়ে কাফনের সাদা কাপড় কিনে জানালার পর্দা টানিয়েছি। ২০২১-২২ বছরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন মনোহরি সামগ্রী কেনার নামে গত ২৬ -৪ -২০২২ ইং তারিখে ২৪ হাজার ৭২৫ টাকা উত্তোলন করে নেয়। একই অর্থ বছরে গত ১৯-৬-২০২২ ইং তারিখে আবারো ভেজষ বাগানের নামে ২৪ হাজার ৯৮৮ টাকাএবং ২৫ হাজার টাকা ও ২৪ হাজার ৯৫৮ টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করে। ওই একই অর্থ বছরে ২৬-৫-২০২২ ইং তারিখে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস মেরামত ও মালামাল কেনা বাবদ ২৪ হাজার ৫৭৫ টাকা উত্তোলন সহ ৩৩ লক্ষ্ ৩ হাজার ৩৩৭ টাকা প্রতিবছর ভুয়া বিল ভাউচারে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করলেও হাসপাতালের কোন ডাক্তার বা কর্মচারীরা কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। এই ভাবে তার দায়িত্ব পালনের সময় কালিনে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীরা জানান।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান দায়িত্বত কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে কোন কিছুই পাইনি এবং এই বিল ভাউচার সম্বন্ধে আমি কিছু জানি না। অফিসের তোয়ালিয়া ও পর্দার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের জানান আমি এসে এই সাদা কাফনের কাপড় কিনে পর্দা টানিয়েছি এবং ভেজস বাগানে গাছ লাগিয়েছি।ওই সময় উপস্থিত হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তাররা এমন তথ্য জানতে পেরে হতবাক হয়ে যান। তারা বলেন বছরের পর বছর এই ভাবে ভুয়া বিল ভাউচারে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন হলেও তারা এ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার তৈয়বুর রহমানের নিকট একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়টি উপজেলাবাসি মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে তদন্ত-পূর্বক আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।