আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মালয়েশিয়া ভ্রমণে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির সরকার। করোনা সংক্রমণের শঙ্কার মধ্যে চীনসহ বিশ্বের সব দেশের যাত্রীদের ক্ষেত্রে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক প্রবেশ পয়েন্টগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশটির সরকার বলেছে, আন্তর্জাতিক প্রবেশপথে নজরদারি ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জালিহা মুস্তাফা।
সপ্তাহ তিনেক আগে চীনে নতুন করে ফের করোনার দাপট দেখা যায়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭। চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে ছড়াচ্ছে নতুন এ ধরন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ২০২০ সালের মতো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বিধিনিষেধ আরোপ করল মালয়েশিয়া।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জালিহা মুস্তাফা বলেন, যাত্রীদের যদি জ্বর ধরা পড়ে, উপসর্গহীন বা স্ব-ঘোষণার মাধ্যমে দেখা যায় অথবা কোভিড-১৯ থাকার প্রবণতা পাওয়া যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের পুনরায় পরীক্ষার জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় আগাম কোভিড-১৯ বৃদ্ধি মোকাবিলায় প্রস্তুতির উন্নতি সাধনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রধান কৌশলের মধ্যে এটি একটি। চীন ৮ জানুয়ারি থেকে মানুষকে আরও অবাধে ভ্রমণ করতে দেবে। কিন্তু দেশের চলমান কোভিড ঢেউ সতর্কতা সৃষ্টি করেছে।
দেশটিতে তথাকথিত ‘জিরো কোভিড’ নীতির মধ্যে ছিল লকডাউন ও ব্যাপক পরীক্ষা। এর ফলে করোনার বিস্তার হ্রাস পেলেও লোকজনের মধ্যে হতাশা দেখা দেয় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। পরে বিক্ষোভের কারণে নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছে দেশটির সরকার। এরপরই আবারও করোনার বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। চীনে এখন প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার জন নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে।
মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন থেকে আসা বিমানের পয়ঃনিষ্কাশন পানির নমুনা পিসিআর পরীক্ষার জন্য জাতীয় জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে এবং তারপর কোভিড-১৯-এর জন্য ইতিবাচক শনাক্ত হলে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
এ ছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা এবং সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনের রোগীদের মতো সব ধরনের রোগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হবে এবং ১৪ দিনের মধ্যে চীন থেকে আসা সবার সঙ্গে যোগাযোগ চলছে তাদের সবাইকে অবশ্যই আরটিকে-এজি পরীক্ষা করাতে হবে।
এখন পর্যন্ত নতুন কোনো কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. নূর হিশাম আবদুল্লাহ। এদিকে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (এফঅ্যান্ডবি) আউটলেট কর্মীদের ১ জানুয়ারি থেকে মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এবার থেকে রাজ্যের সব রেস্তোঁরা এবং রেস্তোরাঁর বাইরে যারা হকার করে খাদ্য বিক্রি করছে, তাদের সবাইকে এ আইন মেনে চলতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রাজ্যের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলি আরোপ করা হলো।
বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ও হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। দোকান, শপিংমল, বাস-ট্রেন, ফ্লাইট, ট্যাক্সি, ই-হেইলিং যানবাহনের পাশাপাশি হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে মাস্ক পরা এখনও বাধ্যতামূলক রয়েছে।