ফেরদৌস আহমেদ :
সামনে ভাংচুরও কাঠের বক্স। ওপরে ঝুলানো রয়েছে পাউরুটি,কেক,বিস্কুট,লাড্ডুসহ কিছু বোকারীর খাদ্য সামগ্রী । ভরদুপুরে ঠাই দাড়িয়ে আছে চল্লিশোর্ধ কওসার আলী । মাথায় টুপি মুখে কাঁচা পাকা দাড়ি। ভাঙ্গা বাক্সের উপরে পাতানো রয়েছে একটি ট্রে। কেটলির পানি দিয়ে চায়ের কাপ গুলো পরিষ্কার করছে। কওসার ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে খরিদ্দারের অপেক্ষায় । টি স্টলের সামনে পৌঁছতেই কওসারের প্রশ্ন- চা খাবেন নাকি ? প্লাস্টিকের অনটাইমের গ্লাস এনেছি ।
না সূচক জবাব পেতেই কওসারের উচ্ছ্বসিত মুখখানা মলিন হয়ে গেলো । সাতক্ষীরা শহরের সার্কিট হাউজ মোড়ের ফুটপাথের চায়ের দোকানী কওসার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,এভাবে আর কতদিন চলবে ? সংসার তো আর চলে না । করোনা ভাইরাসের আতংকে মানুষ এখন আর ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এই মোড় সব সময় মানুষে গিজ গিজ করতো । এমন আর মোড়ে কোন মানুষ নেই । নেই বেচাকেনা । হাজার টাকা বেচা কোনা হলে আড়াই শ” টাকা লাভ হয় ।
লাভের টাকায় চাল ডাল তরিতরকারি কিনে বাড়ি ফিরি । কিন্তু কাঁচা বাজারে আগুন লেগেছে । পনের টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে পচিশ টাকায় । চালের দামও প্রতি কেজিতে পাঁচ থেকে দশ টাকা বেড়ে গেছে ।কয়েক দিনের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে । একে তো চায়ের দোকানে বেচা কেনা নেই,তার পর সংসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে । এভাবে সপ্তাহ খানেক চললে,নাখেয়ে মরতে হবে । কওসার আঙ্গুল তুলে । তিন টি চায়ের দোকানের অবস্থা । কোথাও কোন বেচাকেনা নেই ।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের লক্ষ লক্ষ নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক পরিস্থিতির প্রতিধ্বনি হলো কওসারের কণ্ঠে । কওসারের চায়ের দোকান থেকে কয়েক পা এগিয়ে অনিলের সেলুনের দোকান । ওই সেলুনে চুল দাড়ি কাটতে হলে,স্রিয়ালে অপেক্ষা কেরতে হতো । কিন্তু পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে । অনিলকে এখন খরিদ্দারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় ।
শহরের খুলনা মোড়,সঙ্গীতা মোড়,লাবনি মোড়সহ শহরের প্রতিটা পয়েন্টের একই চিত্র । ভ্যান চালাক রমজান আলী বললো,সকাল থেকে এখনো ৫০ টাকা আয় করতে পারিনি । জানি না দিনভর কয় টাকা আয় করতে পারব । সংসারিবা চলবে কিভাবে ? শহরের পিএন স্কুল মোড়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি ইজিবাইক। এদেরই একজন বকুল বললো,ঘণ্টার উপরে দাড়িয়ে আছি । কিন্তু কোন যাত্রী নেই । জানি না সংসার চলবে কিভাবে ? সারা দেশের চিত্র এমনি । নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারের ঘানি টানা দূরহ হয়ে পড়েছে ।