হোম জাতীয় ‘কয়েকবার গুলির শব্দ, পরে দেখি মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ’

 

জাতীয় ডেস্ক :

‘কয়েকবার গুলির শব্দ, পরে দেখি মেয়ের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটিয়ে আছে। মাথার খুলির একাংশ নেই।’ এমন ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন গুলিতে নিহত ৭ মাস বয়সী শিশু সুরাইয়ার বাবা মনোয়ার বাদশা।

গত ২৭ জুলাই গুলিতে সুরাইয়ার মৃত্যু যেন বাদশার পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। ঘটনার ১২ দিন পার হলেও সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনও শোকে পাথর মা মিনারা বেগমের।

নিহত সুরাইয়ার মা মিনারা বেগম জানান, গত ২৭ জুলাই বিকেলে ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুরাইয়াকে কোলে নিয়ে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেয়া শেষে স্বামী মনোয়ার বাদশার জন্য কেন্দ্র থেকে তিনশো গজ দূরে ফুফু শাশুড়ির বাড়িতে শিশুকন্যাকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এর কিছু সময় পরেই ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে সন্তানকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় মিনারা বেগম। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে পুলিশের গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। ‘ভোটের দাবি মানি না’ এমন কথা বলে পুলিশের একটি গাড়িকে ঘিরে রাখে তারা। এ সময় মিনারা বেগমের ৭ মাসের মেয়েকে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুরাইয়ার মাথায় গুলি লাগে। সন্তানকে রক্তাক্ত দেখে জ্ঞান হায়িয়ে পড়ে যান তিনি।

নিহত সুরাইয়ার বাবা মনোয়ার বাদশা বলেন, ভোটের দিন বিকেলে শিশুকন্যাকে নিয়ে ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাই। ভোট শেষে আমার স্ত্রী মিনারা বাড়ি যাবার উদ্দেশে রওনা দিলে হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে ওঠে এলাকা। এ সময় হুট করে বলা হয় ফলাফল দেয়া হবে ইউএনও অফিসে। ‘কেন্দ্রে কেন দেয়া হবে না’ এ নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রেই। বলা হয় তালা মার্কা জয়ী হয়েছেন।

এরপর খালেদুর রহমানের (মোরগ মার্কা) লোকজন এসে বললো তালা মার্কা কীভাবে জিতল? মোরগ জিতেছে। এ নিয়েই পুলিশ ও এজেন্টেরে সঙ্গে খালেদুরের সমর্থকদের মারামারি হয়। পরে পুলিশ কেন্দ্র থেকে ৩০০ গজ দূরে এলে মোরগ মার্কার সমর্থকরা রাস্তা আটকিয়ে পুলিশকে ভোটের ফলাফল নিয়ে যেতে বাধা দেয়।

ইউপি সদস্য সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার একপর্যায়ে গুলির শব্দ পাই। পুলিশ গুলির পর গ্যাস ছুড়ে স্থান ত্যাগ করেন। তখন আমি সামনে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মাথার একটা অংশ নেই। মেয়ের এই অবস্থা দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

নিহত সুরাইয়ার বাবা মনোয়ার বাদশা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার ১২ দিনেও আমার সন্তানকে কে মারল জানতে পারলাম না। প্রশাসনের লোকজন এসে শুধু বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল জানান, নির্বাচনী সহিংসতায় অজ্ঞাতনামা ৮০০ জনকে আসামি করে থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনও তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন