জাতীয় ডেস্ক :
‘এয়ার বাবল’ চুক্তির অধীনে শুক্রবার (২০ আগস্ট) থেকে সীমিত পরিসরে ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ভারত সরকারের দেওয়া ৩১টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ২০ আগস্ট থেকে ফ্লাইট চালু হবে বলে আশা করছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে চারটির মতো ফ্লাইট চলতে পারে। চিকিৎসাসহ শুধু জরুরি প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিরা চলাচলের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে স্থল সীমান্ত দিয়ে বর্তমানে যেভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশিরা ফিরছেন ফ্লাইটে ফেরার ক্ষেত্রে ঠিক একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
গত ৪ আগস্ট দিল্লির আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির অধীনে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে দেশটিকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে গত ১১ আগস্ট থেকে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে প্রস্তাব দেয় ঢাকা।
বেবিচক সূত্র জানিয়েছে, শর্ত ও ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এই কয়েকটি বিমান সংস্থা ফ্লাইট চালাতে পারবে। অন্যদিকে ভিস্তারা, স্পাইসজেট, ইন্ডিগো বা এয়ার ইন্ডিয়ার মতো যে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলো রয়েছে সেগুলো বিশেষ ফ্লাইট চালাতে পারবে।
গত বছরের অক্টোবরে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করে বাংলাদেশ। তবে ভারতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে গেলে চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে আকাশপথে চলাচল বন্ধ করে দেয় ভারত।
একই সঙ্গে বাংলাদেশও করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৫ জুলাই থেকে ভারতসহ ৮টি দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৪ জুলাই ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ফ্লাইট চালুর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
এদিকে, সোমবার (১৬ আগস্ট) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টিকার দুই ডোজ না নিলে ১১ দেশের যাত্রীদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে যে ১১ দেশের যাত্রীদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না সেই দেশগুলো হলো- আর্জেন্টিনা, বতসোয়ানা, কিউবা, সাইপ্রাস, সোয়াজিল্যান্ড, জর্জিয়া, ইরান, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, স্পেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে সকল যাত্রী এই ১১টি দেশ থেকে আসবেন তাদের অবশ্যই যাত্রার তারিখের ১৪ দিন আগে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নিতে হবে। এছাড়াও দেশে ফিরে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে কারও মধ্যে যদি করোনার লক্ষণ কিংবা উপসর্গ দেখা দেয়, তাকে নিজ খরচে হোটেল বুকিং করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এসব দেশ থেকে ভ্যাকসিন ছাড়া কোনো নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
সেই সঙ্গে এসব দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশের নাগরিকরা স্ব-স্ব দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। একই নির্দেশনা এসব দেশ থেকে আসা নাবিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এছাড়া আরও ১৬টি দেশের যাত্রীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে পৃথক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই দেশগুলো হলো- ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ফ্রান্স, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, কাজাকিস্তান, কুয়েত, নামিবিয়া, কিরগিস্তান, নেদারল্যান্ডস, সাউথ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া ও যুক্তরাজ্য।
এসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নিয়ে আসতে হবে। দেশে ফিরে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে যারা টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেননি তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
এ দেশগুলো বাদে অন্যান্য সব দেশের যাত্রীরা করোনার টিকা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এসব দেশের যাত্রীরা যদি ওপরের ২৭টি দেশের যেকোনো একটি থেকে ট্রানজিট হয়ে বাংলাদেশে আসেন সেক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান তাদের প্লেনে যাত্রাপথে কঠোর নজরদারিতে রাখবে।
বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে যাওয়া (বিদেশগামী) যাত্রীদের জন্য কোনো নির্দেশনা দেয়নি বেবিচক। একই সঙ্গে দেশে আসা ও দেশ ছেড়ে যাওয়া সবাইকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হবে। বিদেশি কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
এ নির্দেশনা আজ থেকেই কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে বেবিচক।