জাতীয় ডেস্ক:
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের অফিসারসহ চার ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাত পৌনে ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
ডিবির হারুন বলেন, ‘ভারতীয় পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, সেখানে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে। তাকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় পুলিশ সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের বিভিন্ন অংশ খুঁজে বের করার ব্যাপারে আশাবাদী।’
বাংলাদেশ এবং ভারতের আর কেউ এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, এ ব্যাপারে তদন্তের পর বলা যাবে।
এর আগে বিকেলে ভারতীয় পুলিশের চার সদস্য ঢাকায় এসে পৌঁছান। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস হয়ে তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরে যান এবং সেখানে বৈঠক করেন। এরপর সন্ধ্যায় ডিবি কার্যালয়ে আসেন তারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আলোচিত এই ঘটনাটি তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও শিগগির কলকাতায় যাবেন। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ভারতীয় পুলিশের কাছে আটক হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
এরও আগে দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, যেহেতু ঘটনাটি ভারতে ঘটেছে, তাই তদন্ত কাজের জন্য ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
দুপুরে ব্রিফিংয়ে ঢাকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার গত ১৩ মে নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। পরে তার মরদেহ থেকে হাড্ডি ও মাংস ছাড়িয়ে কয়েকটি ট্রলিব্যাগে করে সরিয়ে ফেলা হয়।
তিনি আরও জানান, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি ফ্ল্যাটে একাধিক বৈঠক করেছিলেন হত্যাকারীরা। দু-তিন মাস ধরে চলে এই পরিকল্পনা। ভিকটিম (এমপি আনার) প্রায়ই কলকাতায় আসা-যাওয়া করতেন। তাই কলকাতার মাটিতেই তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন সবাই মিলে। পরিকল্পনা মোতাবেক মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ তার সহযোগী তানভীর ভূঁইয়া এবং আখতারুজ্জামান শাহিনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান গত মাসের ৩০ তারিখ যান কলকাতায়। সেখানে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। কলকাতায় আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন আখতারুজ্জামানের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মূল হত্যাকারীর নাম শিমুল ভূঁইয়া হলেও তিনি আমানুল্লাহ আমান নামে নতুন একটি পাসপোর্ট করে সেখানে যান।
হারুন অর রশীদ জানান, হত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে ফিরে আসেন আখতারুজ্জামান। এমপি আনার যে ১২ মে কলকাতায় যাবেন তা আগে থেকেই জানতেন আখতারুজ্জামান। ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান এমপি আনার। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যান হত্যাকারীরা।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি এমপি আনারকে ১৩ মে দুপুরে সাদা গাড়িতে রিসিভ করেন। পরে মূল হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভুইয়া ও ফয়সালসহ আনার ওই ফ্ল্যাটে যান। মোস্তাফিজ নামে আরও একজন ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। জিহাদ ও সিয়াম নামে হত্যাকণ্ডে জড়িত আরও দুজন সেখানে ছিলেন। দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে এমপি আনার ওই বাসায় যান। এ সময় তারা এমপির কাছে আখতারুজ্জামানের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও বলেন। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করেন হত্যাকাণ্ড। হত্যার পর আমান বিষয়টি আখতারুজ্জামানকে জানান।