হোম এক্সক্লুসিভ এবার মুখ খুললেন এডিসি হারুন

রাজনীতি ডেস্ক:

ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় নিয়ে মারধর এবং পরবর্তীতে নানা নাটকিয়তার পর এবার মুখ খুললেন এডিসি হারুন উর রশীদ।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এডিসি হারুন বলেছেন, ‘গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডাক্তার পবিত্র কুমারের কাছে দেখাতে যাই। তখন বেলা ২টার দিকে আমাদের এডিসি ক্রাইম-১ ফোন করে বলেন, তাঁর চেস্ট পেইন (বুকে ব্যথা) সে জন্য বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার প্রফেসর রশিদ স্যারের সিরিয়াল (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) নেওয়া যায় কি না। তখন আমি আমাদের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রমনা থানা আবুল হাসান সাহেবকে বলি একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেওয়ার জন্য। আবুল হাসান সাহেব পরবর্তীতে আমাকে জানান, সন্ধ্যা ৬টায় একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা এডিসি ক্রাইম-১-কে জানাই। উনি সন্ধ্যা ৬টায় ওখানে চলে যান।’

এডিসি হারুনের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘পরবর্তীতে প্রফেসর ডা. আব্দুর রশিদ স্যার বারডেমের কনফারেন্স বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে সময় দিতে পারছিলেন না। কিন্তু পেশেন্ট (এডিসি সানজিদা) সেখানে গিয়ে অসুস্থ বোধ করছিলেন। এরপর আমাকে বলে, স্যার এখানে ডাক্তার সম্ভবত ব্যস্ত আছেন, উনি আজকে সময় দিতে পারবেন না। কিন্তু আমি সিক ফিল (অসুস্থ বোধ) করছি। তখন আমি বললাম, আমি কাছেই আছি, দেখি কথা বলি ডাক্তারের সঙ্গে। আমি সেখানে যাই। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর ডাক্তার দেখেন।’

হারুন বলেন, ‘পরবর্তীতে তাকে (এডিসি সানজিদা) তিনটি টেস্ট করান। ইসিজি, ইকো এবং ইটিটি। যখন ইটিটি রুমের ভেতরে পেশেন্ট ছিলেন আমি তখন বাইরে ভিজিটরেরা যেখানে অপেক্ষা করেন সেখানে ছিলাম। তখন আজিজুল হক মামুন (এডিসি সানজিদার স্বামী) এবং তাঁর সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন আসেন। তিনি পেশেন্টের রুমে যান, পেশেন্ট দেখেন। দেখে বাইরে এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার বাম চোখের ওপরে একটা ঘুষি মারেন। আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ভাই আপনি আমাকে কেন মারলেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। তখন তার সঙ্গে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরাও আমার ওপরে চড়াও হন। তাঁরা আমাকে জোরপূর্বক ইটিটি রুমের ভেতরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। সেখানে পেশেন্টের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা ওখানেও আমাকে মারধর করেন। পরবর্তীতে আমি আত্মরক্ষার্থে শাহবাগ থানা-পুলিশকে কল করি। শাহবাগ থানা-পুলিশ এসে সকলকে থানায় নিয়ে যায়।’

তিন ছাত্রলীগ নেতাকে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন–অর–রশীদের নেতৃত্বে মারধরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা। তাঁকে কেন্দ্র করেই গত শনিবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক নেতাকে মারধরের ঘটনার পর এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এডিসি হারুনও সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী।

ওই দিনের ঘটনা একই দিন মুখ খুলেছেন সানজিদা আফরিন। তিনি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকালে বলেন, ‘আমার কিছু কার্ডিয়াক সমস্যা ছিল। চার-পাঁচ মাস ধরে বুকে ব্যথা বেড়ে গিয়েছিল। আমি ল্যাবএইডে যে চিকিৎসকের অধীনে ছিলাম, তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। আমার জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়ায় গত শনিবার ইব্রাহীম কার্ডিয়াকে যাই। স্যার (এডিসি হারুন) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দিয়ে একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেন। আমার একজন কার্ডিয়াক চিকিৎসকের দরকার ছিল, তাই আমি অফিস থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেখানে যাই।’

সানজিদা বলেন, ‘কিন্তু চিকিৎসক তখন একটি কনফারেন্সে ছিলেন। এরপর স্যারকে (এডিসি হারুন) বিষয়টি জানাই। তিনি তখন হাসপাতালটির আশপাশেই ছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর স্যার আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি চিকিৎসক ম্যানেজ করেন। এরপর আমি চিকিৎসক দেখিয়ে বেশ কিছু টেস্ট করাই।’

ঘটনার সময় ইটিটি করাচ্ছিলেন জানিয়ে সানজিদা আফরিন বলেন, ‘ইটিটিতে বেশ সময় লাগে। ২০/২৫ মিনিটের মতো। ইটিটি যখন শেষ পর্যায়ে তখন আমি একটি হট্টগোল শুনতে পাই। এ সময় এডিসি স্যারকে বলতে শুনি, “ভাই, আমার গায়ে হাত তোলেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না”। আমি ভাবছিলাম অন্য কারও ঝামেলা। পরে আমি এসে দেখি আমার হাজব্যান্ড। ওনাকে আউট অব মাইন্ড লাগছিল। তাঁকে উত্তেজিত লাগছিল। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। তাঁদের হাত থেকে বাঁচতে স্যার ইটিটি কক্ষের একটি কর্নারে যান। আমার হাজব্যান্ড তখন ওই ছেলেগুলোকে বলে, “তোরা এই দুজনের ভিডিও কর”। তখন আমি ইটিটির পোশাকে ছিলাম। সেই কক্ষে কোনো ছেলে প্রবেশের কথা না। আমি এই বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে শাউট (উচ্চ স্বরে কথা) করি। তখন আমার স্বামী আমাকে দুটি চড় দেয়। এ সময় আমার গাড়িচালক মাঝখানে দাঁড়ায়। এ সময় আমি এরপর দেখি আরও একজন ছেলে ভিডিও করতেছিল, তখন আমি তার কাছ থেকে ক্যামেরা নেওয়ার চেষ্টা করি। তখন তার সঙ্গেও আমার হাতাহাতি হয়।’

সানজিদা বলেন, ‘আমার স্বামী আমার গায়ে হাত তোলে। তখন এডিসি স্যারকে টেনেহিঁচড়ে তারা রুম থেকে বের করার চেষ্টা করে। এডিসি স্যার তখন বলতে থাকেন, “এখান থেকে আমাকে বের করলে তো মেরে ফেলবেন”। এরপর এডিসি স্যার ফোর্সকে খবর দেন। এর মধ্যে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরাও আসেন। ফোর্স আসা পর্যন্ত এডিসি হারুন ইটিটি কক্ষেই ছিলেন। ১০/১৫ মিনিট পর ফোর্স আসে। এরপর এডিসি হারুন চলে যান। আমার বডিগার্ডের ওপরও তারা হাত তোলে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন