হোম এক্সক্লুসিভ এবার ঈদ আনন্দ নেই ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর

এবার ঈদ আনন্দ নেই ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর

কর্তৃক
০ মন্তব্য 89 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

রাজধানীর মাটিকাটায় স্কাইলার্ক মডেল স্কুলের শিক্ষক মামুনুর রশীদ। করোনায় স্কুল বন্ধের পর গত মার্চ থেকে কোনো বেতন পাচ্ছেন না তিনি। বন্ধ আছে প্রাইভেট টিউশনিও। গত এপ্রিলেই পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। এর পর থেকে স্কুলের একটি কক্ষেই তিনি থাকছেন।

মামুনুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স সাত বছর। আর মেয়ের বয়স পাঁচ মাস। ছেলের জন্মগ্রহণের পর এবারই ওদের ছাড়া ঈদ করতে হচ্ছে। বাড়িতে যে যাব, হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। তাই ঢাকায়ই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

খুবই কষ্ট লাগছে; কিন্তু কোনো উপায়ই নেই। ফুটপাতে একজনের দোকানের সহকারী হিসেবে কাজ করছি। যা পাই তা দিয়ে কোনো রকম চলছি। ছেলে-মেয়েকেও কিছু একটা কিনে দিতে পারলাম না।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে না হলেও দিশাহারা অবস্থায় আছেন ১০ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী। বেতনের সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ হওয়ায় সংকট আরো বেড়েছে। ফলে এই শিক্ষক-কর্মচারীরা জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। ঈদের আনন্দের কথা তাঁরা ভাবতেও পারছেন না।

সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। দেশের প্রায় সাত হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ২৫ হাজার শিক্ষক বেতন না পেয়ে দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকরা প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতায় এখনো নন-এমপিওভুক্ত। এ ছাড়া সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় তিন লাখ খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন যাঁদের বেশির ভাগকেই মার্চ মাসের পর থেকে বেতন-ভাতা দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে পড়ালেখা করলেও করোনায় কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। এরই মধ্যে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকদের কষ্ট বলে বোঝানোর মতো নয়। ঈদের আনন্দের কথা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবছেন না। যদি আমাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলেও আমরা এ যাত্রায় বেঁচে যেতাম।’

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক ও ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে প্রায় ৪৬ কোটি টাকার অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৫১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষক ও ১০ হাজার ২০৪ জন কর্মচারীকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে একজন শিক্ষক পাঁচ হাজার ও কর্মচারী আড়াই হাজার করে টাকা পেয়েছেন।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের জন্য অবশ্যই তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পাঁচ হাজার টাকায় একজন শিক্ষক কত দিন চলতে পারেন? আগে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করলে কিছু টাকা পেতেন।

কিন্তু করোনার পর তাও বন্ধ। চলতি অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির বরাদ্দের ব্যাপারে এখনো আমরা কিছু জানতে পারিনি। চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন আমাদের শিক্ষক-কর্মচারীরা।’

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি এস এম জয়নাল আবেদিন জিহাদী বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হয়ে গেছে। কিন্তু ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ তো দূরের কথা, এখনো এমপিওভুক্তও হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের এমপিওভুক্তির জন্য গত অর্থবছরে বরাদ্দ দিলেও মন্ত্রণালয়ের গাফিলতিতে এমপিও হয়নি। ৩৬ বছর ধরেই আমাদের শিক্ষকদের ঈদের আনন্দ নেই।’

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, ‘এমপিওভুক্ত কলেজে চাকরি করেও আমরা নন-এমপিও শিক্ষক। দীর্ঘদিনেও আমাদের জনবল কাঠামোতেই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

অথচ আমরা লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। সামনে ঈদ অথচ বেতন নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন