নিউজ ডেস্ক:
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারমূল্যে গত এক বছরে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উদ্বিগ্ন ইকুইটি বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপেই মাত্র তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকগুলোর মোট বাজারমূল্য কমেছে ৯২৬ কোটি টাকা।
২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদর রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর বিপরীতে নেমে আসে ২ টাকা ৬০ পয়সায়, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১ টাকা ৮০ পয়সায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ টাকা ৯০ পয়সায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ টাকা ৪০ পয়সায় এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪ টাকায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যমতে, গত তিন মাসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বাজারমূল্য সবচেয়ে বেশি কমেছে—মোট ৩৪২ কোটি টাকা।
তবে সময়সীমা যদি ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত পেছানো হয়—অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় পর্যন্ত—তাহলে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি। গত ১৩ মাসে এই পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত বাজারমূল্য কমেছে ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮৩ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট পাঁচটি ব্যাংকের সম্মিলিত বাজারমূল্য ছিল ৪ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। সে সময় ব্যাংকগুলোর শেয়ারমূল্য ছিল ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ দশমিক ১ টাকার মধ্যে। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে তা নেমে আসে ১ দশমিক ৮ থেকে ৪ দশমিক ৪ টাকার মধ্যে। এই সময়ে কোনো কোনো ব্যাংকের শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৭৩ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত মোট বাজারমূল্য কমেছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা।
আগে লভ্যাংশের কারণে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু এখন ইতিহাসের সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হলেও ক্রেতা বা বিনিয়োগকারী কম। একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত, দুর্বল আর্থিক ভিত্তি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানো—সব মিলিয়ে এই খাতের ওপর পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
শুধু পাঁচ ইসলামী ব্যাংকই নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতই বর্তমানে সংকটে। অনিয়ম, লাগামহীন খেলাপি ঋণ এবং তারল্য সংকটে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এর মধ্যে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রি করেছেন। এমনকি ব্যাংক গঠনের সময় বিনিয়োগ করা শেয়ারও ছাড়ছেন তারা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মূলত চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গ্রুপটি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে বিভিন্ন কোম্পানির নামে শেয়ার কিনে ধীরে ধীরে এসব ব্যাংকের মালিকানা নেয় এবং নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের পর্ষদে বসিয়ে নামে-বেনামে ঋণ নেয়। ওই ঋণের বড় অংশই এখন খেলাপি।
এ অবস্থায় গ্রাহক আস্থা সংকট ও খেলাপি ঋণের চাপে জর্জরিত পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।