রাজনীতি ডেস্ক:
সরকারের পতন ছাড়া আলেমদের মুক্তি হবে না মন্তব্য করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী বলেছেন, একদলীয় নির্বাচন প্রতিরোধ করা হবে।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) জুমার পর রাজধানীর বায়তুল মোকররমের উত্তর পাশের রাস্তায় বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের উদ্যোগে আল্লামা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি পরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল হাসানাত জালালির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমিরে মজলিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী। প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক মাওলানা রাকীবুল ইসলাম ও মজলিসে শুরা খাসের সদস্য মাওলানা ওলিউল্লাহ মাহমুদের পরিচালনায় সমাবেশে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, এই সরকার সত্য প্রকাশে নির্ভয় আপসহীন নেতা আল্লামা মামুনুল হকসহ অসংখ্য আলেমকে সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচার বসিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। অচিরেই আলেমদের মুক্তি আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেবে।
আমরা বাংলাদেশি জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনগণের সাথে তাদের মুক্তি সংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করছি। সেই সাথে এ সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের ওপর জায়নবাদী সন্ত্রাসী ইসরাইল ও তাদের দোসরদের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, যদি অবিলম্বে আল্লামা মামুনুল হক, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমি, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ কারাবন্দি আলেমদের মুক্তি দেয়া না হয়, তাহলে আমরা এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে যুবসমাজ ও জনগণকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। জনগণ এখন মুক্তি চায়। স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসন থেকে মুক্তি চায়। উলামায়ে কেরামসহ সব নিরপরাধ মানুষের মুক্তি চায়। জনগণ মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তি চায়।
তারা আরও বলেন, ‘এ সরকার দেশ পরিচালনায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে হাসির পাত্রে পরিণত করেছে। নিজেদের হীন স্বার্থে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিদেশি হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ সরকারের আমলে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকারি বাহিনীর পরিচয়ে একের পর এক গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের ঘটনা শত শত সন্তানকে এতিম করে দিয়েছে। আমরা গুম হওয়া নিখোঁজ সব মানুষের সন্ধান চাই।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিরে মজলিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আলেমবিরোধী অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে। তারা শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এই বাংলাদেশে শাপলা চত্বরের হত্যাকারী ও আলেমদের ওপর নির্যাতনকারীদের বিচার করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় আলেম ও নেতা মাওলানা মামুনুল হক। তার মুক্তির জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু এই জালিম সরকার এতে কর্ণপাত করছে না। এই সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এ সরকারের পতন ছাড়া দেশ শান্ত হবে না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের দাবি হলো নির্দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচন করা। আলেমদের বন্দি অবস্থায় কোনো নির্বাচন এ দেশের জনগণ চায় না।’
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আবুল হাসানাত জালালি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। নিরীহ নিরপরাধ মানুষ দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, বিনা বিচারে বিনা অপরাধে জেল খাটছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন প্রমুখ।
যুব সমাবেশ থেকে আল্লামা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবিতে আগামী ৩ নভেম্বর ঢাকায় পদযাত্রা, ১০ নভেম্বর জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের ঢাকায় ছাত্র সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।