হোম অন্যান্যসারাদেশ একটানে জেলের ভাগ্য বদল, পেলো ১৭০ মণ ইলিশ

কুয়াকাটা প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে লক্ষিপুরের রামগতি এলাকার জেলে আবুল খায়ের এর এফবি রিভারমেট ট্রলারে ১৭০ মন ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। এ উপকূলে এ যাবতকালের মধ্যে কোনো জেলের জালে ধরা পড়া এটা হলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মাছ। গতকাল বিকেলে জেলে আবুল খায়ের এ মাছ উপজেলার অন্যতম বড় মাছের মোকাম মহিপুর মৎস্য বন্দরের মিঠুন ফিশ নামে একটি আড়তে ৫৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

এফবি রিভারমেট ট্রলারের অপর জেলে মো. ইউনুস মাঝী জানান, তাঁরা গত ২০ আগষ্ট রামগতি থেকে সাগরে মাছ ধরার জন্য যান। গত ২৩ আগষ্ট সকালে তাঁরা মাছ ধরার জন্য সাগরে জাল ফেলেন। এদিন বিকেলে জাল তোলেন এবং প্রচুর ইলিশ মাছ পান। এরপর তাঁরা মহিপুর মৎস্য বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। গতকাল ২৬ আগষ্ট দুপুরে তাঁরা মহিপুরে পৌঁছান।

জেলে আবুল খায়ের জানান, তিনি মাছের ব্যবসা করতে গিয়ে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। যে কারণে স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে তিনি ৮ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে তা দিয়ে জ্বালানীসহ প্রয়োজনীয় খাবার কিনে এবার সাগরে মাছ ধরতে যান। একবার জাল ফেলার পর তা তুলতে গিয়ে তিনি দেখেন জালে প্রচুর পরিমানে ইলিশ ধরা পড়েছে। মৎস্য বন্দর মহিপুরে মিঠুন মৎস্য আড়তে আসার পর মাছ মেপে দেখেন ১৭০ মন ইলিশ ধরা পড়েছে তাঁর জালে।

মহিপুর মৎস্য বন্দরের মিঠুন ফিশের মালিক মিঠুন দাস বলেন, জেলে আবুল খায়েরের জালে বিভিন্ন সাইজের মাছ ধরা পড়েছে। এর মধ্য ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের এলসি সাইজের মাছ রয়েছে ৫৭ মণ। ৪২ হাজার টাকা দরে এর দাম হয়েছে ২৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ ধরা পড়েছে ৬৮ মণ। ৩৩ হাজার টাকা দরে দাম হয়েছে ২২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। তিনটায় এক কেজি হয় এমন সাইজের ইলিশ ধরা পড়েছে ৯ মণ। ২৭ হাজার টাকা দরে দাম হয়েছে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। ১ কেজি থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ধরা পড়েছে ১ মণ। এর দাম হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। ট্রলারে সঠিকভাবে ধরা পড়া ইলিশগুলো সুরক্ষা করতে না পারায় ৫০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের পাম (পঁচা) ইলিশ হয়েছে ৩৫ মণ। ১৫ হাজার টাকা দরে এর দাম হয়েছে ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।

জেলে আবুল খায়ের আরও বলেন, ‘মানুষ কতে অসহায় হইলে স্ত্রীর গহনা বন্ধক রাখে বলেন? আই এক্কেবারে শেষ হই গেছিলাম। আল্লাহ আর দিকে মুখ হিরাই চাইছে। অন আর স্ত্রীর বন্ধক রাখা গহনা হিয়ান ছাড়াইমু। ঘরখান ভাঙ্গি আছে। হিয়ান মেরামত করমু। বাকি টেয়াগুন অন্য কাজে খাডাইমু।’

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও ইলিশ গবেষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার দেরিতে ইলিশ আহরণ শুরু হয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে ইলিশের বড় অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর-আলিপুর সংলগ্ন কুয়াকাটা থেকে ঢালচর পর্যন্ত সাগর সীমানায় মহিসোপান (কন্টিনেন্টাল সেল্ফ) দীর্ঘ বা প্রলম্বিত হওয়ায় এবং এলাকাটি অ্যালুভিয়াল বা পলিজ হওয়ায় নদীর সাথে সাগরের সংযোগ ক্যানাল বা চ্যানেল পলি পড়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে; যার কারণে পরিবর্তিত চ্যানেলের সাথে আর এর অভিপ্রায়ণশীল ইলিশের চিনে উঠতে সময় লাগছে এবং অচেনা পথে ইলিশ অভিপ্রায়ণে কিছুটা বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ইলিশ বিশেষজ্ঞ মো. কামরুল ইসলাম আরও বলেন, সাগরের পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুষণ প্রতিরোধে জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে ; বিশেষ করে প্লাস্টিক ও মাইক্রো প্লাস্টিক দুষণ প্রতিরোধে জেলেদের নিয়মিতভাবে সজাগ করে তোলার কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। মোহনা ও সাগর দুষণ প্রতিরোধ করা গেলে জাতীয় ইলিশের উৎপাদনের এমন ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন