হোম খেলাধুলা একই দিনে আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছিলেন মেসি-রোনালদো

স্পোর্টস ডেস্ক:

ক্লাব ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির যা অর্জন তাতেই ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরার তালিকায় তাদের নাম থাকবেই। ফুটবলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্প রূপকথার গল্প হয়ে থাকবে নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের জন্য তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। বয়স ৩০ এর ঘর ছাড়ানোর পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ইউরো জয়ের মধ্য দিয়ে শিরোপা খরা কাটান। তার পথ ধরে ৩০ এর পর মেসিও গড়েছেন ইতিহাস।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি এই প্রজন্মের বাকি ফুটবলাদের চেয়ে যে অনেকখানি এগিয়ে সে বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তারা যেন একে অন্যের পরিপূরক ছিলেন ক্যারিয়ারের অনেকটা জুড়ে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যদিয়ে লড়াইয়ে মেসি অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একে অন্যকে ছাড়িয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত। আজ মেসি এগিয়ে যান তো পরদিনই তাকে ছাড়িয়ে যান রোনালদো। আর্জেন্টাইন মহাতারকা কোন বড় কীর্তি গড়লেই পর্তুগিজ মহাতারকারও কীর্তি গড়া যেন অবধারিতই ছিল।

রোনালদো ও মেসির প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে একটা তথ্যই যথেষ্ট – ২০০৭ সালে কাকার ব্যালন ডি’অর জেতার পর থেকে ২০১৮ সালে লুকা মদ্রিচ জেতার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যালন ডি’অর হয় মেসি জিতেছেন নতুবা রোনালদো জিতেছেন।

এ সময়ে ক্লাব ফুটবলে তাদের মতো সাফল্য পাননি আর কেউই। তবে জাতীয় দলের হয়ে কিছুতেই সাফল্য ধরা দিচ্ছিল না এই দুই মহাতারকাকে। ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকে রোনালদো যখন উঠতি তারকা; তখন পর্তুগালের সোনালী প্রজন্ম ইউরোর ফাইনালে উঠেও গ্রীসের কাছে হেরে যায়। সেদিন তরুণ রোনালদোর চোখের পানি আবেগতাড়িত করেছিল সবাইকেই।

শিরোপা জেতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন মেসিও। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টাইন মহাতারকার। এরপর আরও তিনবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি মেসির। মাঝখানে তো দুঃখে অবসরও নিয়ে ফেলেছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম শিরোপা অবশ্য রোনালদোকেই ধরা দেয়। ২০১৬ সালে ইউরোর ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতে পর্তুগাল। ১ যুগ আগের ফাইনালের মতো এদিনও রোনালদোর চোখ ভিজেছে কান্নায়, কিন্তু এবার সে কান্না ছিল আনন্দের। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে জিততে রোনালদোর বয়স পেরিয়ে গেছে ৩১ বছর।

ইউরো জেতার পর আরও একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন রোনালদো। ২০১৯ সালে উয়েফা নেশন্স লিগের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতে পর্তুগাল।

ক্যারিয়ার জুড়েই একে অন্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো দুই মহাতারকার একজন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতবেন আরেকজন বসে বসে দেখবেন? – না, মেসিও আন্তর্জাতিক শিরোপা ছুঁয়ে দেখেছেন। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে দীর্ঘ ২৯ বছর পর কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি পান ক্যারিয়ারের আন্তর্জাতিক শিরোপার স্বাদ। টানা চার ফাইনাল হারের পর সাফল্য ধরা দেয় আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে। সেই সঙ্গে যেন হয় শাপমোচন। প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে জিততে মেসির বয়স ততদিনে ছুঁয়েছে ৩৪!

কোপা আমেরিকা দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির যে জয়যাত্রা শুরু হয় তা এখনো চলমান। কোপার পর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের শিরোপাও বগলদাবা করেছেন মেসি। তাতে ৩৬ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। একই বছরে এর আগে জিতেছে লা ফিনালিসিমাও। আন্তর্জাতিক শিরোপায় রোনালদোকে পেছনে ফেলেছেন মেসি।

মেসি ও রোনালদোর আন্তর্জাতিক শিরোপাখরা কাটার গল্পে বড় বড় মিল আছে। যে মিল দেখলে মনে হবে কোন পাকা চিত্রনাট্যকার যেন এর চিত্রনাট্য লিখেছেন। মহাদেশীয় শিরোপা দিয়েই দুই কিংবদন্তির শিরোপাখরা কাটার মিল তো আছেই। কিন্তু এমন একটা মিলও আছে যা চোখ কপালে তুলে দিতে পারে। মেসি ও রোনালদোর আন্তর্জাতিক শিরোপাখরা কাটার তারিখে যে আছে আশ্চর্য মিল। ফ্রান্সের বিপক্ষে ইউরোর ফাইনালে পর্তুগাল মাঠে নামে ২০১৬ সালের ১০ জুলাই (বাংলাদেশ সময় ১১ জুলাই)। এর ঠিক পাঁচ বছর পর ২০২১ সালের ১০ জুলাই (বাংলাদেশ সময় ১১ জুলাই) কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারায় আর্জেন্টিনা। দুই দলের জয়ের ব্যবধানও একই। ফ্রান্সকে এদারের অতিরিক্ত সময়ের একমাত্র গোলে হারায় পর্তুগাল। আর আর্জেন্টিনা জয় পায় অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার প্রথমার্ধে করা একমাত্র গোলেই।

আজকের দিনটিতেই আন্তর্জাতিক শিরোপাখরা দূর হয়েছিল দুই কিংবদন্তির।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন