আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেছেন, ইসরাইলকে শর্তহীন হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওযার ‘গ্রিন সিগনাল’ দেয়া উচিত নয়। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) এক বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক অভিযানের পর থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার ও বিরামহীনভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
এই সংঘাতে বরাবরের মতোই শুরু থেকেই ইসরাইলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। তারা বক্তব্য, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।’ যা গাজায় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদনের নামান্তর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার দোহায় কেন্দ্রীয় শুরা কাউন্সিলে বার্ষিক ভাষণ দেন কাতারের আমির। বলেন, ‘আমরা বলব, যথেষ্ট হয়েছে। গাজায় হত্যাকাণ্ডে চালাতে ইসরাইলকে শর্তহীন সবুজ সংকেত এবং হত্যার অবাধ অনুমোদন দেয়া উচিত হবে না। এটা সব আন্তর্জাতিক আইন এবং ধর্মীয় ও সামাজিক নৈতিকতার পরিপন্থি।’
শেখ তামিম বিন হামাদ আরও বলেন, ইসরাইল ও হামাসের লড়াই এক ভয়ঙ্কর সংঘাত যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে এমনকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন।
সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে কাতার। তবে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার ও বিরামহীন বিমান হামলা ও বেসামরিক নাগরিক হত্যার ব্যাপারে প্রথমবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন দেশটির সরকার প্রধান।
ইসরাইল-ফিলিস্তি সংঘাতে মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে বিমান হামলা থামানো ও হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলিদের মুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ কাতার। দেশটির মধ্যস্থতায় হামাস এরই মধ্যে চারজন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
হামাসের অভিযানের পর থেকে গাজায় গত ১৭ দিন ধরে বিরামহীন বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সংখ্যা ২ হাজার ৫৫ জন এবং নারী রয়েছেন ১ হাজার ১১৯ জন।
সেই সঙ্গে গাজার ওপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করেছে ইসরাইল। যদিও গত দুই দিনে মিশরের রাফা ক্রসিং দিয়ে কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। যেটাকে ‘মরুভূমির মধ্যে এক ফোটা বৃষ্টি’ বলে অভিহিত করেছেন পর্যবেক্ষকরা।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে কাতার। দেশটির আমির বলেন, আমরা এই বিপজ্জনক সংঘাতের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি শিশুদের মূল্যহীন ভাবছে-মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘(ফিলিস্তিন ইস্যুতে) আমরা দ্বিচারিতা এবং এমন কর্মকাণ্ড মেনে নেব না যেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবন গণনায় ধরা হবে না, যেন তাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই, কিংবা তাদের কোনো নাম-পরিচয় নেই।’
আলজাজিরা বলছে, অবিরাম ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে গাজাবাসী সামান্য বিরতিও পাচ্ছে না। রাতভর চলছে ইসরাইলি বিমান হামলা। হামাস নিয়ন্ত্রিক গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রাফাহ ও খান ইউনিসেই নিহত হয়েছে ৫৫ জন।