হোম আন্তর্জাতিক ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান একশো দিনে গড়ালো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের একশো দিনে গড়িয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ অভিযান শুক্রবার (৩ জুন) একশো দিন পূর্ণ হয়। এ সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পঞ্চম অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার দেশের ২০ শতাংশ অঞ্চল তথা পাঁচভাগের একভাগই রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে।

একই সঙ্গে রাশিয়াকে রুখতে আবারও পশ্চিমাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা চেয়েছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেয়া নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জোট প্রধান।

সীমান্তে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ও ন্যাটোর সদস্যপদ লাভ ঠেকাতে গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে বিশেষ সেনা অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সময়ের পরিক্রমায় ওই অভিযান একশো’ দিন পার করলেও এতটুকু কমেনি অভিযানের মাত্রা। প্রতিদিনই হামলা-পালটা হামলা চলছে। দফায় দফায় গোলাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে একের পর এক এলাকা। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনবাসে সেনা অভিযান জোরদার করেছে রাশিয়া। পর থেকেই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রায় প্রতিদিনই তীব্র রকেট হামলা চালিয়ে আসছে পুতিন বাহিনী। এরই মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও করেছে তারা। সবশেষ দোনেৎস্কের উপশহর সেভেরোদোনেৎস্ক দখলে নিতে গেল কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় গোলাবর্ষণ করে আসছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় সেনারা অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর দ্বারপ্রান্তে বলেও জানান স্থানীয় গভর্নর।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, রুশ বাহিনী দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ইউক্রেনের পঞ্চম অঞ্চল হিসেবে সেভেরোদোনেৎস্কের অধিকাংশ এলাকাও রুশ সেনাদের দখলে চলে গেছে বলেও দাবি তার। এ অবস্থায় রাশিয়াকে ঠেকাতে পশ্চিমাদের কাছে আরও বেশি করে অস্ত্র সহায়তা চেয়েছেন জেলেনস্কি।

পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। যে কোনো মূহূর্তে কয়েকটি অঞ্চলের পতন হতে পারে। প্রতিদিনি সেখানে ১০০ মানুষ মারা যাচ্ছে। আহত হচ্ছেন গড়ে প্রায় পাঁচশ। রাশিয়া তাদের সর্বশক্তি দিয়ে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পশ্চিমারা যেভাবে আমাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু রাশিয়াকে রুখতে এ সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে।

এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া কেবল কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়, পাশাপাশি নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে, ইইউকে রুশ জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়া ন্যাটোর পরিসর কমিয়ে আনতে চেয়েছিল বলেই জোট আজ সম্প্রসারণের পথে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া নিয়ে তুরস্ক আপত্তি তোলায় এ নিয়ে আঙ্কারার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।

গত একশো দিনের লড়াইয়ে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, এ যুদ্ধ শিশুদের একটি বিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন দৃশ্য আর দেখা যায়নি।

ইউক্রেনের প্রধান প্রসিকিউটরের অফিস বুধবার জানায়, রাশিয়ার হামলায় কমপক্ষে ২৪৩ শিশু মারা গেছে। রুশ বাহিনীর হাতে আরও ৪৪৬ শিশু আহত হয়েছে। জাতিসংঘের ধারণা, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে কমপক্ষে চার হাজার ১৪৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও চার হাজার ৯৪৫ জন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য মতে, যুদ্ধে ইউক্রেনে প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ধরনের বাস্তুচ্যুত মানুষের মোট সংখ্যা ৭৭ লাখ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, ৬৮ লাখেরও বেশি মানুষ পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

ইউক্রেনের দাবি, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৪ হাজার ২০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মোট চার দফায় মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। এর মধ্যে তিন দফায় বেলারুশে এবং এক দফা তুরস্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলারুশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয়পক্ষই বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্মত হয়।

রাশিয়ার অভিযান মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। নতুন করে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। এরইমধ্যে দেশটির পার্লামেন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জার্মান চ্যান্সেলর।

এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে রক্ষায় মাঝারি পাল্লার রকেট সিস্টেম পাঠানোর বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত বলছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করেন, পশ্চিমা বিশ্বের এইসব ভারী অস্ত্র দিয়েও এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন