আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা। তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এখনও সমঝোতা হয়নি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে ন্যাটো ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
বার্লিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা এই নজিরবিহীন প্রস্তাব দেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তবে তারা সতর্ক করে বলেন, এই প্রস্তাব গ্রহণের সুযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের অবসানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে আশাবাদী ইউরোপীয় নেতারা। তবে জার্মানির বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে মস্কোর দিক থেকে এখনও ইতিবাচক সাড়া দেখা যায়নি।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা যুদ্ধের অবসান করার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, বার্লিনে আলোচনায় জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তাদের নৈশভোজে তিনি ফোনে যুক্ত হয়েছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমাদের বহুবার কথা হয়েছে। আমার মনে হয়, আমরা আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে কাছাকাছি এসেছি। এখন দেখা যাক কী হয়।
ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান বদলের ইঙ্গিতকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা।
জার্মান চ্যান্সেলর এবং আলোচনার আয়োজক ফ্রেডরিখ মারজ এক্সে লেখেন, যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বার্লিন ছেড়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমবারের মতো আমার মনে হয়েছে, সবাই এক জোটের মিত্রদের মতো আচরণ করছে। প্রথমবার মার্কিন প্রতিনিধির মুখে শুনলাম—যুক্তরাষ্ট্র এমনভাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় যুক্ত হবে, যেন রাশিয়ার কোনও সন্দেহ না থাকে যে আবার হামলা হলে মার্কিন প্রতিক্রিয়া হবে সামরিক।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি এখন আরও স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে, যা টেকসই শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে অনেক জটিল প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে—বিশেষ করে ভূখণ্ড নিয়ে এবং রাশিয়া আদৌ শান্তি চায় কি না।
আলোচনার পর জেলেনস্কি বলেন, মস্কো যদি কিয়েভ, ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে আলোচিত প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করে, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার এবং ইউক্রেনকে আরও দীর্ঘপাল্লাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দেওয়ার অনুরোধ করবেন।
হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, আমি মনে করি, পুতিন যদি সবকিছু প্রত্যাখ্যান করেন, তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়াবে এবং আমাদের আরও অস্ত্র দেওয়া হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ওপর চাপ দিচ্ছে যেন তারা পূর্বাঞ্চলীয় ডোনেস্ক অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। এটি ইউক্রেনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ভূখণ্ড ছাড়ের প্রশ্নকে আগে “বেদনাদায়ক” উল্লেখ করা জেলেনস্কি আলোচনার পর পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ইউক্রেন ডনবাসকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আইনি বা কার্যকর কোনও স্বীকৃতিই দেবে না।
মার্কিন কর্মকর্তারা কনফারেন্স কলে সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। একজন বলেন, দীর্ঘদিনের ভূখণ্ডগত ইস্যু রয়ে গেলেও, মতবিরোধ ঘোচাতে আমরা একাধিক সমাধান প্রস্তাব করছি।
ইউক্রেন আগে থেকেই বলে আসছে, তারা কোনও ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেবে না। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২০ শতাংশ দখলে নিয়েছে।
আলোচনা সম্পর্কে অবহিত এক ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া এখনও তার দাবিতে ছাড় দেয়নি। তিনি বলেন, পরিবেশ ইতিবাচক, কিন্তু মূল বিষয়গুলো অর্জনে এখনও দেরি।
সূত্র: রয়টার্স
