অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর তিনটি স্পটে বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘এটা বীভৎস দৃশ্য। মানুষের মনুষত্ববোধ বলতে কোনও জিনিস আছে, সেটা থেকে বহু গভীরে নিয়ে গেছে তা (মনুষত্ব) নিশ্চিহ্ন করার জন্য। নৃশংস অবস্থা…. প্রতিটি জিনিস যে এখানে হয়েছে। যতটুকু শুনেছি, এটা অবিশ্বাস্য মনে হয়… এটা কি আমাদেরই জগত? আমাদেরই সমাজ?’
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় তিনটি স্পট পরিদর্শন করেন তিনি। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এই স্পটগুলো আগে ‘নির্যাতন সেল’ এবং ‘গোপন কারাগার’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব ‘নির্যাতন সেল’ এবং ‘গোপন কারাগারের’ ভুক্তভোগীদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারাই নিগৃহীত হয়েছেন, যারা এটার শিকার হয়েছেন; তারাও আমাদের সঙ্গে আছেন। তাদের মুখ থেকেই শুনলাম- কীভাবে হয়েছে। কোনও ব্যাখ্যা নেই।… বিনাকারণে রাস্তা থেকে উঠিয়ে আনা হলো, বিনাদোষে কতগুলো সাক্ষী তৈরি করে কোনও একটা ঘটনায় ঢুকিয়ে দিয়ে বলা হলো- তুমি সন্ত্রাসী, জঙ্গি। এগুলো বলে বলে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এধরনের ইন্টারোগেশন সেল, টর্চার সেল দেশজুড়ে আছে, সেটা শুনলাম আজকে। আমার ধারণা ছিল, এই আয়নাঘর শুধু এখানেই (রাজধানীতে) যে কয়েকটা আছে। এরপর আজ শুনলাম এগুলোর বিভিন্ন ভার্সন সারা দেশে আছে। কেউ বলছেন ৭০০, কেউ বলছেন ৮০০; সংখ্যাও নিরুপণ করা যায়নি, কতটা আছে। এরমধ্যে কতগুলো জানা আছে, কতগুলো অজানা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া (অন্ধকার যুগ) প্রতিষ্ঠা’ করেছিল বলে মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইয়ামে জাহেলিয়া বলে একটা কথা আছে না, গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে। এটা (গোপন বন্দিশালা) তার একটি নমুনা।’
মানুষকে সামান্যতম মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একজন বলছিলেন, খুপরির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর থেকে তো মুরগির খাঁচাও বড় হয়। বছরের পর বছর এভাবে রাখা হয়েছে।’
‘এসব থেকে বের করে না আনা গেলে, সমাজ টিকবে না’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। নতুন সমাজ গড়া, অপরাধীদের বিচার করা ও প্রমাণ রক্ষার ওপর জোর দেন তিনি।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ন্যায়বিচার যেন পায়, সেটা এখন প্রাধান্য। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন পরিবেশ গড়তে চাই। সরকার সে লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন করেছে। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করবে।’
এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রমুখ।