হোম জাতীয় আসামির নাম বাদ দিতে বাদীকে হাজতে ঢোকালো পুলিশ!

জাতীয় ডেস্ক:

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বাদী ও তার বোনকে থানা হাজতে আটকে হত্যা মামলার এজাহারের পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টির তদন্ত নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।

শনিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় সহকারী পুলিশ সুপার (হাতিয়া সার্কেল) আমান উল্যাহ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় শনিবার বাদীসহ সাক্ষীদের জবানবন্দি নেয়া হচ্ছে। পরে অভিযুক্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শককেও (তদন্ত) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট (শনিবার) রাত ১০টার দিকে হাতিয়ার চরকিং ইউনিয়নের হর কুমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মো. মিজানুর রহমান (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত মোস্তাফিজুর রহমান চৌকিদারের ছেলে।

এ ঘটনায় ৭ আগস্ট (সোমবার) নিহতের বড়ভাই মাফুজুর রহমান (৪০) বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে যান। এ সময় তিনি ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এজাহার দাখিল করেন।

পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমির হোসেন ও পরিদর্শক (তদন্ত) কাঞ্চন কান্তি দাস তার ওপর চড়াও হন এবং আসামির তালিকা থেকে পাঁচ জনের নাম বাদ দিতে বলেন।

মাফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, পুলিশের কথামতো পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে রাজি না হওয়ায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাঞ্চন কান্তি দাস আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা বোন মিনারা বেগমকে হাজতে আটক করে রাখেন। এক ঘণ্টা পর আমার বোনকে ছেড়ে দিলেও আমাকে পরদিন ৮ আগস্ট রাত পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা থানা হাজতে থাকতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এ সময়ের মধ্যে ওসি তদন্ত আমাকে আসামির নাম বাদ দিতে নানানভাবে চাপ দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। অন্যথায় ভাই হত্যা মামলায় আসামি করে অথবা ৫০০ ইয়াবা দিয়ে আমাকে আদালতে চালান দেয়ারও হুমকি দেন তিনি। তাদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরে মামলার এজাহার থেকে আসামি মো. আজাদ (৩৭), আবু তাহের (৫০), আজমির হোসেন (৩৫), জাকের হোসেন (৪৫) ও মোশারেফ হোসেনের (৩৫) নাম বাদ দিয়ে নতুন এজাহারে সই করেতে বাধ্য হই।

এদিকে পরিদর্শক (তদন্ত) কাঞ্চন কান্তি দাস অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বাদীর দায়ের করা এজাহারটি হত্যা মামলা (নম্বর-২) হিসেবে রুজু করা হয়েছে। যাতে এজাহারনামীয় ১০ আসামি হলেন, শাকিল (২৫), শামছুদ্দিন (৪৫), ইয়াছিন আরাফাত (২৩), জহিরুল ইসলাম (৩২), মো. ফাহিম (৩৫), নজরুল ইসলাম (৪৫), মো. ফারুক (৪৮), আবদুর রহমান মিঠু (২৭), আমিরুল ইসলাম (৫০) ও আলা উদ্দিন ভুট্টু (২২)। এখানে আসামি বাদ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমির হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। তবে মামলা দায়েরের সময় আমি থানায় ছিলাম। বাদীকে আটক কিংবা এজাহার পরিবর্তনের ঘটনা সঠিক নয়। বাদীর দায়ের করা অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করে তদন্ত চলছে। তিনি দাবি করেন, থানার সিসি ক্যামেরা ফুটেজে অভিযোগের সঙ্গে মিলে যায় এমন কোনো ফুটেজ নেই।

এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত চলছে জানিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (হাতিয়া সার্কেল) মো. আমান উল্যাহ বলেন, বাদী ও তার বোনকে বারবার খবর দেয়ার পর তারা ভয়ে পুলিশের কাছে আসতে চাচ্ছিলেন না। অভয় দেয়ার পরে আজ (শনিবার) তাদের সবাইকে হাজির করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওসি এবং পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গেও কথা হবে।

তদন্তে দোষী প্রাণ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন