আশাশুনি প্রতিনিধি :
আশাশুনিতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নিউজ প্রকাশ হওয়ায় পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন নির্যাতিত প্রধান শিক্ষকরা। অন্যদিকে জানাগেছে, দূর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ লোপাটের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অটিস্টিট ডিভাইস ক্রয় বাবদ বরাদ্ধকৃত (ভ্যাটসহ) ৯৫ হাজার টাকার ক্রয়কৃত মালামাল ও বিতরণের তালিকার অফিস কপি দেখতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গাজী ছাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু আমার আশাশুনিতে যোগদানের আগের বিষয় এটি। তারপরও এ সংক্রান্ত কাগজপত্র অফিসের প্রধান সহকারীর কাছে থাকার কথা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রধান সহকারী সিরাজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাছে এ সংক্রান্ত কাগজপত্রের এক কপি থাকার কথা। আমি রবিউল ইসলাম স্যারের কাছে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে অটিস্টিট ডিভাইস ক্রয় বা বিতরণের কাগজপত্রের কোন কপি দেননি।
রবিউল ইসলামের ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন কালে তার নির্দেশে পরপর দুটি মডেল টেস্টে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রশ্ন ফি বাবদ বেশি অর্থ আদাইয়ের প্রতিবাদ করায় উপজেলার ১৬নং শীতলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালামের বিরুদ্ধে অসদাচরন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম প্রতিবেদককে বলেন, রবিউল ইসলাম স্যারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনকালে মডেল টেস্ট মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদ করলে এখানে উপস্থিত প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। এসময় রবিউল ইসলাম স্যার শিক্ষকদের একপক্ষের সমর্থন করে বাকবিতণ্ডা আরেকটু বেগবান করতে সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে বিনা নোটিশে বিনা তদন্তে আমার বিরুদ্ধে অসদাচরন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেন। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে উল্লেখ আছে আমি অসদাচরণ করি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, গরীব এলাকার অসহায় অভিভাবকের বাচ্চাদের থেকে প্রশ্ন ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে ভ্যাটো দেওয়া কি অসদাচরণের আওতায় পড়ে ? আমি শীতলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করি ১৭ সেপ্টেম্বর-২০১৭ কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের স্লিপেরসহ অন্যান্য আর্থিক খাতের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে যেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হয়রানিমূলক। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে থাই গ্লাসের বরাদ্ধকৃত টাকার অধ্যেক কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ভ্যাটসহ দেড় লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৩৬০ বর্গফুট, ১০জোড়া অর্থাৎ ২০ পিচ থাইগ্লাস লাগানো হয়েছে যেটা এখনও দৃশ্যমান। আমি যোগদানের পর থেকে যাবতীয় অর্থনৈতিক বিষয় তৎকালীন সহকারী শিক্ষা অফিসার মনির আহমেদ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিনের উপস্থিতে হয়েছে। এমনকি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আক্তার হোসেন, উপজেলা সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ও তৎকালিন সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহাজান আলীর প্রত্যায়নের মাধ্যমে থাইগ্লাসের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
এছাড়া কুল্যা ইউনিয়নের আগড়দাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বেনামী অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম সেখানে যান। অভিযোগকারী এবং অভিযোগকারীর সঠিক কোন ঠিকানায় উপনীত হতে না পেরেও তিনি তদন্ত কাজ অব্যাহত রাখেন। সে সময় উপস্থিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, এসএমসি’র সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অভিযোগকারী ব্যক্তি এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারি শিক্ষক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম সে সময় উপস্থিত সকলেরের সাথে ঢ়ূড় এবং অসদাচরণ করেন। অভিযোগ কারী ব্যক্তির কোন সঠিক ঠিকানা না পাওয়া এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়েছে সে বিষয়ে উল্লেখ না করে একজন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কিভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে আগ্রহী হতে পারেন একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার। বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পরবর্তীতে উপস্থিত ম্যানেজিং কমিটি, এসএমসি ও অভিভাবকদের সমন্বয় ৭০ জন একত্রিত হয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসারের এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সিগ্নেসার করতে বাধ্য হন। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানালেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রধান শিক্ষক এস এম আলাউদ্দিন।
উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের কালকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও শিক্ষকদের এরিয়া বেতন ছাড় পাওয়ায় বড়দল ক্লাস্টারে দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে খরজ বাবদ বড় অংকের অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আসে। এবিষয়ে জানতে চাইলে কালকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয় প্রকাশ প্রতিবেদককে জানান, বড় অংকের নয় তবে ৪ লক্ষ ২৫ হাজারের মত টাকা খরজ বাবদ দেয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে উপজেলা উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের খরজ ও দেখানো হয়েছে। এসবের মাধ্যম ছিলেন, রবিউল ইসলাম স্যার। তৎকালীন সময়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য অটিস্টিক ডিভাইস ক্রয় ও বিতরনে অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বললে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লিখিত ভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গাজী ছাইফুল সাহেবকে লিখিত ভাবে দিতে বলে দেব।
উল্লেখ্য, কিছু দিন পূর্বে আশাশুনিতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্ন