হোম অন্যান্যশিক্ষা আরেক ছাত্রীর অভিযোগ: নিপীড়নের ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অধ্যাপক নাদির

আরেক ছাত্রীর অভিযোগ: নিপীড়নের ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অধ্যাপক নাদির

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 79 ভিউজ

শিক্ষা ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।

এতে বিভাগের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা থাকাকালে যৌন নিপীড়নের একটি অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ অভিযোগটি করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সদ্যসাবেক এক ছাত্রী।

অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ২০২২ সালে সহপাঠীর কাছ থেকে মৌখিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সে সময় বিভাগে অভিযোগ করলে শিক্ষার্থী উপদেষ্টা হিসেবে নাদির জুনাইদকে দায়িত্ব দেয়া হয় সেটা নিষ্পত্তি করার। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অধ্যাপক নাদিরের পছন্দের হওয়ায় তাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে, উল্টো ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়।

প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘ঘটনার বিচার করতে বসে শিক্ষক নাদির জুনাইদ তার (অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর) দোষ হালকা করার চেষ্টা করেন। কারণ অভিযুক্ত শিক্ষকের একজন ঘনিষ্ঠ ছাত্র। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সৌমিককে (অভিযুক্ত শিক্ষার্থী) জিজ্ঞেসও করেন যে সে খেয়ে এসেছে কিনা। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী আমাকেই জেরা করতে শুরু করেন। ওইদিন বিচারের রুমে বসে কথাগুলো শুনেই কান্না করে দিয়েছিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত সৌমিক সার্বিক ঘটনার জন্য ক্ষমা চায়। তবে ক্ষমা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার আমার যে দাবি, তা মেনে নেননি অধ্যাপক নাদির জুনাইদ। নিজের প্রিয় ছাত্রের ছাত্রজীবন কালিমামুক্ত রাখতেই তিনি এটা করেছিলেন।’

অভিযোগের বিষয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা হয় নাদির জুনাইদের। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নাদির জুনাইদ বলেন, ‘অভিযোগটি সত্য নয়। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগীয় প্রধান, অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকে নিয়ে আলোচনা হয়। বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে ওই বৈঠকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ওই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চায়। তাকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার জন্য সতর্ক করা হয়। পরবর্তীতে অভিযোগকারী ছাত্রীকে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়।’

কোনোভাবেই ওই ছাত্রীকে কোনো চাপ দেয়া হয়নি এবং ঘটনা ধামাচাপারও চেষ্টা হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষক নাদির জুনাইদ।

তিনি আরও দাবি করেন, ‘আগামী কয়েক মাস পরেই আমার বিভাগীয় প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একের পর এক অভিযোগ তুলে আমাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।’ ধারাবাহিক অভিযোগের বিষয়কে তিনি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্ত চান।

এদিকে রোববার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ১৩ থেকে ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ক্লাস ও সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক নাদিরের বিরুদ্ধে ওঠা ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিচার চান। এরপরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে মধুর ক্যান্টিন হয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এসময় উপাচার্যের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি কথা বলেন। পরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি ভিসি চত্বর হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে দুপুর ২টায় মানববন্ধন করেন তারা।

রোববার বেলা ১১টা থেকে বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদের অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় চেয়ারপারসনের অফিস থেকে একাধিক শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, সাংবাদিকতা বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান তারা। বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানা যায় না। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন না তারা।

বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো: অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা; যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন