অনলাইন ডেস্ক:
আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের অফিস দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বললেন, আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। ২৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নীলফামারি থেকে ঢাকায় ফিরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ে যান আসিফ মাহমুদ। তখন তার সঙ্গে ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার দিনগত রাতে যখন সচিবালয়ে আগুন লাগে তখন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছিলেন নীলফামারিতে। আগুনের খবর শুনে সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে এসেছেন ঢাকায়।
এই ভবনের ৬তলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তাদেরকে সব ফাইল পুড়ে যাওয়ার কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মাঝখানের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচতলা পর্যন্ত আগুনে কোনো ক্ষতি হয়নি। ৭ম তলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। ৮ম তলায় রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের কিছু অংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কিছু অংশ।
এ ভবনের নয় তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। এ চারটি তলা পুরো পুড়ে গেছে। প্রতিটি কক্ষের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও দেয়ালের অংশ খসে পড়েছে। সিড়ি ধসে গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোড়া ধ্বংস স্তূপ।
আগুন নেভার পর পুরো ভবনটি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
পুড়ে যাওয়া অংশ থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সচিবালয়ের ভেতরে টহল দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা।
এর আগে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমাদের ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থ লোপাট, দুর্নীতি নিয়ে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছিলেন। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন উপদেষ্টা।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, তারা আগুন লাগার খবর পায় গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল। আজ সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আর দুপুর পৌনে ১২টায় আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।