হোম রাজনীতি আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ বিএনপির

রাজনীতি ডেস্ক:

বিএনপি এক দফা দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন করছে। এ আন্দোলন বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে মহাসমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত দলটি। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ‘পরিকল্পনামাফিক’ বাস্তবায়ন না হওয়ায়, দলটির আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। ফলে চলতি আগস্ট মাস থেমে থেমে কর্মসূচি দিয়ে পার করছে দলটি। বিএনপি নতুন রোডম্যাপ নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছে। জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই রাজপথে সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবির সমাধান করতে চায় বিএনপি ।

দলটির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, রাজপথে আন্দোলন ব্যতিরেকে অন্য কোনো পথ বিএনপির সামনে এখন আর খোলা নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে নভেম্বরের কথা বলা হলেও বিএনপির কাছে তথ্য আছে, তাদের অপ্রস্তুত রেখে অক্টোবরের যেকোনো সময় দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। তবে তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত চলমান আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যেতে চায় না দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপির আন্দোলন এখন শুধু বিএনপির নয়, এটি দেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিকে জনগণের যে অংশগ্রহণ, সেটি তাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান এক দফার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দাবি আদায় করা হবে। সেক্ষেত্রে জনদাবি পূরণে যখন যে কর্মসূচি দেয়া প্রয়োজন সেটিই দেয়া হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এক দফার যুগপৎ আন্দোলন গতি লাভ করবে। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের শেষদিকে গিয়ে আন্দোলন গতি লাভ করবে। ওই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। তখন কর্মসূচি হবে আবার ঢাকাকেন্দ্রিক। বিচারালয়ের সামনে অবস্থান ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, গণভবন, সচিবালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের সাথে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাও করা হচ্ছে । এর আগে দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে বিএনপি। আলোচনা সভা ছাড়াও বিশাল আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি করবে দলটি। নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে র্যালিকে এক দফার কর্মসূচির মতো রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করছে হাইকমান্ড।

জানা গেছে, গত সোমবার বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী দিনের আন্দোলন নিয়ে শীর্ষ নেতারা মতামত দিয়েছেন। বৈঠকে কেউ কেউ দ্রুত সময়ের মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর মতামত দিয়েছেন। তবে মধ্য সেপ্টেম্বরের আগে বড় কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছে না হাইকমান্ড। এই সময়ে এক দফা দাবিতে কিছু কর্মসূচি থাকবে তবে তা চলমান কর্মসূচির মতোই পালিত হবে।

সরকারবিরোধী বড় আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সে সময় দলটির পরিকল্পনা ছিল, ঢাকাকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে আন্দোলনকে লক্ষ্যে পৌঁছানো। কারণ, মহাসমাবেশ ঘিরে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে মহাসমাবেশের পরদিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দলের চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবায়িত না হওয়ায় কর্মসূচিকেন্দ্রিক নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করে হাইকমান্ড। নেতাকর্মীরা লাগাতার কর্মসূচির পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বিরতি দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসে এখন পর্যন্ত নরম কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

এদিকে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে ‘সমন্বয়হীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতা’র বিষয়টি সামনে চলে আসায় আন্দোলনে গতি আনতে এরই মধ্যে কিছু সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভেঙে দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবদলের কমিটি। ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অন্য অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্বে থাকা আন্দোলনবিমুখ নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছিল। তবে গত ১১ আগস্ট ঢাকার গণমিছিলে ব্যাপক জনসমাগমের পর দলের হাইকমান্ড কঠোর অবস্থান থেকে আপাতত সরে এসেছে। অবশ্য এখনই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া না হলেও নিস্ক্রিয় নেতাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এক দফা দাবিতে আসন্ন চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে যাতে ছন্দপতন না হয় এবং লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, সেজন্য কাজ করছে দল। বিশেষ করে কর্মসূচি বস্তবায়নের জন্য হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে দলের বিভিন্ন স্তরে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দলীয় বিভিন্ন ফোরামের নেতাদের সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন হাইকমান্ড। সেখানে ওই নির্দেশনার পাশাপাশি এই বার্তাও দেয়া হচ্ছে যে, সরকারের সাথে কোনো সমঝোতা বা আপস নয়। রাজপথের আন্দোলনেই দাবি আদায় করতে হবে। মাঠে থেকে প্রতিটি কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে হবে।

বিএনপির অভিযোগ, এক দফার আন্দোলন দমাতে সরকার হামলা-মামলা, দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বেড়েছে। দলের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে কিছু নেতা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে এটা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে দল।

এদিকে গত শনিবার রাতে তানভীর আহমেদ রবিন গ্রেফতার হওয়ার প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলনে রাজধানীতে সংগঠনের গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে দক্ষিণে কাকে দায়িত্ব দেয়া যায়, সে ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে তিনি কারামুক্ত না হলে তার স্থলে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে । গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু গ্রেফতারের ১৭ মাস পর গত ৫ জুলাই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হয়।

আজ ঢাকায়, কাল মহানগরে কালো পতাকা মিছিল : সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার ঢাকায় ‘কালো পতাকা গণমিছিল’ করবে বিএনপিসহ সমমনাজোটগুলো। এছাড়া আগামীকাল ২৬ আগস্ট সকল মহানগরে এই কালো পতাকা গণমিছিল হবে। ঢাকায় বিএনপি মহানগরের উদ্যোগে কালো পতাকার গণমিছিল হবে দু’টি। একটি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী লিংক রোড থেকে মোহাম্মপুর বাস বাসস্ট্যান্ড এবং অন্যটি মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত।
গণতন্ত্র মঞ্চ শাহবাগ, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগ, এলডিপির পূর্ব পান্থপথ, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ জাতীয় প্রেস ক্লাব, গণঅধিকার পরিষদ (নূর) ফকিরাপুল কালভার্ট রোড, এনডিএম মালিবাগ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সেগুনবাগিচা ও জনতার অধিকার পার্টি বিজয়নগর পানি ট্যাংকের কাছ থেকে কালো পতাকা মিছিল বের করবে।

গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এই পর্যন্ত ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকায় গণমিছিল, মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরে গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে প্রায় অর্ধশত দলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন