রাজনীতি ডেস্ক:
ভোটের মাঠে লড়ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু। আর তাকে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ! অবাক মনে হলেও এমনটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব মজিবুল হক নির্বাচনী পোস্টারে।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নির্বাচনী পোষ্টারে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে তোলপাড় চলছে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। কিন্তু তার নির্বাচনী পোস্টারে লেখা রয়েছে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’। এতেই বাধে বিপত্তি। জোট-মহাজোটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে গত ৪টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিতে হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর।
এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন নৌকার প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ। তবে দলের বাধা না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের তিন নেতা। কিন্তু জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পোস্টারে ‘জাতীয় পার্টির মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লেখা থাকায় করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
করিমগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির স্বপন জানান, জাতীয় পার্টির জন্য এই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত কোনো প্রার্থী নেই। তবে আওয়ামী লীগ করে এমন তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। কাজেই চুন্নু আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হতে পারে না। এটা লজ্জাজনক। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পোস্টার আওয়ামী লীগের সমর্থনের কথা উল্লেখ করায় দলের কর্মী-সমর্থকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।
কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মো. নাসিমুল হক বলেন, ‘এটা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন। একটি দলের প্রার্থী তার নির্বাচনী পোস্টারে অন্য কোনো দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে লিখতে পারেন না। এটার প্রতিবাদ জানাই।’
ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহফুজুল হক হায়দার বলেন, ‘চুন্নুর সঙ্গে দলের হাই কমান্ডের এমন কোনো চুক্তি হয়নি। তার জন্য নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে সত্য। তবে আসনটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কাজেই পোস্টারে তাকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করাটা একটা লজ্জাজনক ঘটনা।’
পোস্টার থেকে অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নাম বাদ দেয়ার দাবি জানান তারা। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন বলে দাবি করে স্থানীয় জাপা নেতারা বলছেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও এবার লাঙ্গল মার্কায় ভোট দেবেন।
করিমগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করে এখান থেকে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাই আমরা আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পোস্টারে মজিবুল হক চুন্নুকে উল্লেখ করেছি। করিমগঞ্জ- তাড়াইলের ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থক ও ভোটার আসন্ন নির্বাচনের লাঙ্গল মার্কায় ভোট দেবেন বলেও দাবি করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা।
তবে এটি নির্বাচনে আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক নাসিরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি, এখন ইচ্ছে করলে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশলের কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মজিবুল হক চুন্নুকে আসনটি ছেড়ে দেয়ায় এবার নিয়ে চতুর্থ বারের মতো দলের মনোনয়ন পেয়েও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করতে হয় আলহাজ নাসিরুল উসলাম খান আওলাদকে। করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে এবার ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।