জাতীয় ডেস্ক:
মিয়ানমার থেকে অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশকারী সেই ২২ রোহিঙ্গার মধ্যে ১১ জনকে রিমান্ডের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে ওই ১১ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়ার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাছির উদ্দিন মজুমদার।
তিনি জানান, আদালত ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে অসুস্থ একজন ছাড়া অপর ২২ জনের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১১ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের ৩ দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানোর পরই অপর ১১ জনকে রিমান্ডে নেয়া হবে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যের পাশাপাশি অস্ত্রধারী ২৩ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেন। এদের বিরুদ্ধে ৯ ফেব্রুয়ারি বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েব সুবেদার মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করে উখিয়া থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরদিন ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে এদের আদালতে পাঠানো হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা শুনানি শেষে ২২ জনের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গ্রেফতারের পর কারাগারে থাকা মো. সাদেক নামের এক রোহিঙ্গা অসুস্থ হওয়ায় তার রিমান্ডের অনুমতি দেননি বিচারক।
পুলিশ পরিদর্শক নাছির উদ্দিন মজুমদার জানান, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের সময় অস্ত্রসহ গ্রেফতার এই ২৩ জনের সবাই রোহিঙ্গা; যারা উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। স্বাভাবিক কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের যাওয়ার কথা না। কিন্তু কী কারণে মিয়ানমারে গেল আর তাদের হাতে অস্ত্র কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি। ৩ দিনের রিমান্ড শেষে অধিকতর প্রয়োজনে আবারও রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে।
গ্রেফতার ২৩ জন কারা?
বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েব সুবেদার মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে দায়ের করা অস্ত্র মামলার এজাহারে ২৩ জনের নাম, ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। এজাহারে উল্লেখিত তথ্য মতে, গ্রেফতার ২৩ জন হলেন- উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের মৃত কবির আহমদের ছেলে মো. হোসেন আহমদ (৩০), একই ক্যাম্পের মো. ইউনুসের ছেলে মো. রফিক (২৩), আ. রাজ্জাকের ছেলে আয়াতুল্লাহ (৩০), ৯ নম্বর ক্যাম্পের মো. রফিকের ছেলে মো. জুনাইদ (১৯), একই ক্যাম্পের নুর কালামের ছেলে মো. হারুন (২৩), সমসের আলমের ছেলে মো. কায়সার (১৯), রশিদ আহমেদের ছেলে মো. সাবের (১৯), ১০ নম্বর ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছেলে ওসামা (১৯), একই ক্যাম্পের জাফর আলমের ছেলে ওমর ফারুক (১৯), মো. তোহার ছেলে মো. সাদেক (১৯), মকবুল আহমদের ছেলে হারুন অর রশিদ (২৪), হামিদ হোসেনের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (১৯), দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. ইসমাইল (১৯), মো. হোসেনের ছেলে মো. রহিম (১৯), ১১ নম্বর ক্যাম্পের আতা উল্লাহর ছেলে নজু মোল্লা (৩৮), ১৫ নম্বর ক্যাম্পের মো. সৈয়দের ছেলে সৈয়দ উল্লাহ (১৯), একই ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদের ছেলে হাফেজ আহমেদ (১৯), ২০ নম্বর ক্যাম্পের মো. রশিদের ছেলে মো. জোবায়ের (১৯), কুতুপালং এলাকার ৬ নম্বর ক্যাম্পের ইউসুফের ছেলে আব্দুল্লাহ (২০), একই এলাকার ৩ নম্বর ক্যাম্পের আবুল হাসেমের ছেলে এনামুল হাসান (২২), ২ ক্যাম্পের ইমাম হোসেনের ছেলে মো. রফিক (২৪), একই ক্যাম্পের মৃত আবুল কালামের ছেলে সৈয়দুল ইসলাম (২৪), ৭ নম্বর ক্যাম্পের মৃত মো. জলিলের ছেলে মো. আরমান (২১)।
উদ্ধার ১২ অস্ত্র ও ৮ শতাধিক রাউন্ড গুলি
এ ঘটনায় উদ্ধার হয়েছে ১২টি অস্ত্র; যেখানে রয়েছে, এসএমজি ৫টি, জি-৩ রাইফেল একটি, পিস্তল দুটি, রিভলবার ৪টি। গুলির মধ্যে রয়েছে- এসএমজি গুলি ১৯৮ রাউন্ড, এমজি গুলি ৯৮ রাউন্ড, রাইফেলের গুলি ২৭৬ রাউন্ড, জি-৩ রাইফেলের গুলি ১০৩ রাউন্ড, পিস্তলের গুলি ১৯৩ রাউন্ড, পিস্তলের কার্তুজ ২৫ রাউন্ড, রাইফেলের গ্রেনেড ফিউজ ৫ রাউন্ড, এসএমজি ম্যাগাজিন ৬টি, এলএমজি ম্যাগাজিন ৪টি, জি-৩ ম্যাগাজিন একটি, পিস্তল ম্যাগাজিন দুটি।