ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
বাগেরহাটের সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী দীর্ঘ তিন মাস ধরে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তার শরীরে নতুন করে আরো দু’টি উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর থেকে এই সাংবাদিকের শরীরে একের পর এক উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথম তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল এর পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে তার চিকিৎসকা করে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা তার সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী একাত্তর টিভির বাগেরহাটের স্টাফ রিপোর্টার। এছাড়া তিনি বার্তা সংস্থা ইউএনবি এবং কালের কন্ঠ’র জেলা প্রতিনিধি। ঐতিহ্যবাহি বাগেরহাট প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত।
১৬ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তীকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউতে) ভর্তি করা হয়। সেখানে দুই দফায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে বৃহত পরিসরে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সেখানের চিকিৎসকরাও এখনো সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। ওই সাংবাদিকের শরীরে নতুন করে আরো দু’টি উপসর্গ দেখা দিয়েছে। বিএসএমএমইউ থেকে এক মাসের জন্য ছুটি নিয়ে বর্তমানে বাগেরহাট শহরের শালতলায় নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিষ্ণু প্রসাদ।
চিকিৎসা নিতে শিগ্রই তাকে বিএসএমএমইউতে ফিরে আসতে হবে। সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট প্রেসক্লাব সভা করে সিদ্বান্ত নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারক লিপি দিয়েছেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তার সুস্থতা কামনা করেছে। বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা করা হয়েছে।
জানা গেছে, সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী ৭ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট সদর হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। এর দেড় ঘন্টার মধ্যে তার শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথমে মাথাঘোরা, মাথায় যন্ত্রণা, জ্বর,বুকে ব্যাথা, মেমোরিলস, শ্বাসনিতে কষ্ট,চোখে ঝাপসা দেখা,শরীরে অস্বস্তি, হাত-পায়ে অনুভুতি কম, ঘাড় এবং কোমর ব্যাথা, পায়ের শীরায় টান লাগাসহ বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ যুক্ত হতে থাকে।
প্রতিদিন একের পর এক উপসর্গ মোকাবেলা করতে হয় তাকে। নতুন করে তার ঘাড়ের রগনালিসহ গলায় ব্যাথা এবং কোমর থেকে দুই পায়ের পাতা পর্যন্ত রগে টানসহ মাঝে মধ্যে শরীরের নিচের অংশ অবস হয়ে আসছে। একের পর এক উপসর্গ দেখা দেওয়ায় গত ১৬ মার্চ তাকে বাগেরহাট থেকে এয়ার এম্বুলেন্সে যোগে বিএসএমএমইউতে এনে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে দুই দফায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
বি এস এম এম ইউর মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসার ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফতের অধিনে তিনি ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা তার মাথার সিটিএস্কান, বুকের সিটিএস্কান,ঘাড় ও কোমরের এমআরআই,বোনমেরু, মেরুদন্ডের লালা,এক্সেরে,ইসিজি, আলট্রসোনোগ্রাফি,বোনমেরুস্কান,রক্তসহ শরীরের বিভিন্ন ধরণের অসংখ্য পরীক্ষা করানো হয়। বিএসএমএমইউতে এখনো তিনটি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা নিদিষ্ট ভাবে তার রোগ নির্ণয় করতে পারেনি।
সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী জানান, তার শারীরিক অসুস্থতা রয়ে গেছে। নতুন করে আরো দু’টি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। প্রতিটি মুহুত্ব আমাকে নানা উপসর্গ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমার অনুরোধে গত ৫ এপ্রিল বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা আমাকে এক মাসের জন্য রিলিজ দিয়েছে। সেখানে দেওয়া তিনটি টেস্ট রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। ওই টেস্ট রিপোর্ট পওয়ার পর আবারো চিকিৎসার জন্য আমাকে বিএসএমএমইউতে যেতে হবে। শারিরীক অসুস্থতার বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশে চিকিৎসকদের সাথে নানা ভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চিকিৎসা সহযোগীতায় এগিয়ে আসায় বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক,ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিনসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী।
তিনি বলেন,সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা আর হাজারো মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমি বেঁচে আছি। সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারো পেশাগত কাজে ফিরতে চায়। বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এই সাংবাদিককে বিদেশে নিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তার সহকর্মীরা। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারক লিপি দেওয়া হয়েছে।