স্টাফ রিপোর্টার:
সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ে (দুদক) দুর্নীতির দুটি এজাহার দায়ের হয়েছে। এজাহারে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৫০ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৫ টাকা অর্জন এবং ২৯ ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগ আনা হয়েছে।
একটি এজাহারে বাদী ঢাকা দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম। এই মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটির বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল-আমিন। সেটিতে অভিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে।
মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল আমিন।
প্রথম এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য পরস্পর যোগসাজসে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। নিজ নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১০ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ৫৮৩ টাকা জমা এবং ৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৯ টাকা উত্তোলনপূর্বক সন্দেহজনক লেনদেন করে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে মানি লন্ডারিং করেছেন। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, অনুসন্ধানকালে আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্যর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়নি। তার নামে ব্যবসায়িক পুঁজি, আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার এবং বিভিন্ন ব্যাংক স্থিতিসহ মোট ৬ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ১০১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
আয়কর নথি অনুযায়ী, তন্দ্রা ভট্টাচার্যের পারিবারিক ব্যয় ৬০ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৩ টাকা। ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৪ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয়কর নথি খোলার সময় পূর্ববর্তী সঞ্চয়, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত গৃহ সম্পত্তির আয়, করমুক্ত আয়সহ মোট ১৭ হাজার ৪০০ টাকার আয় পাওয়া যায়। এছাড়া ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর নথি অনুযায়ী তার ঋণ বা দায়-দেনার তথ্য পাওয়া যায়। ঋণসহ তার মোট আয়ের পরিমাণ ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০৩ টাকা। এতে দেখা যায়, আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্যের জ্ঞাত আয়ের উৎসের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ টাকা, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আসামি স্বপন ভট্টাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণ করে প্রভাব ও আর্থিক সহায়তায় তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যকে অসৎভাবে সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন, যা দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তন্দ্রা ভট্টাচার্য তার নিজ নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১০ কোটি ৩৬ লাখা ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা জমা এবং ৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৯ টাকা উত্তোলন করেছেন, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন। তিনি তার স্বামী স্বপন ভট্টাচার্যের ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
দ্বিতীয় এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি স্বপন ভট্টাচার্য অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারী দায়িত্বশীল পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ১৫১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। নিজ নামে ১৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৪ টাকা জমা করেছেন এবং ৪০ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৪ টাকা উত্তোলনপূর্বক অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, অনুসন্ধানকালে আসামি স্বপন ভট্টাচার্যর ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ব্যবসায়িক পুঁজি, আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকারসহ ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
আয়কর নথি অনুযায়ী, তার পারিবারিক ব্যয় ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৮ টাকা। ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয়কর নথি অনুযায়ী তার মোট আয় ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা।
এছাড়া ২০২৩-২৪ করবর্ষে তার ঋণ তথ্য অনুযায়ী তার মোট ঋণ ২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৫ টাকা। ঋণসহ তার মোট আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ১৭৭ টাকা। এতে দেখা যায়, আসামি স্বপন ভট্টাচার্য অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৫২ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ১৫১ টাকা, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামি স্বপন ভট্টাচার্য ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিজ নামে ১৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩০৪ টাকা জমা করেছেন এবং ৪০ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৪ টাকা উত্তোলন করেছেন। এই লেনদেন অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটি রুজুর অনুমোদন প্রদান করেছে দুদক কর্তৃপক্ষ।