জাতীয় ডেস্ক:
আবারও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানা গেছে।
সবশেষ মন্ত্রিসভায়ও তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া স্বতন্ত্রদের মধ্যে বিজয়ী হন ৬২ জন, যাদের মধ্যে ৫৯ জন আওয়ামী লীগেরই নেতা। আর জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। দুটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি। একটি আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পরদিন ১০ জানুয়ারি (বুধবার) শপথ নেন নবনির্বাচিত এমপিরা। আর এমপিদের শপথ গ্রহণের একদিন পর বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) শপথ নিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে যা জানা যায়:
তিনি নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ এবং সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন।
শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় যুব, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ওবায়দুল কাদের।
২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালে ২১তম সম্মেলন এবং ২০২২ সালের ২২তম সম্মেলন মিলিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
রাজনীতির পাশাপাশি ওবায়দুল কাদের দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
ওবায়দুল কাদেরের জন্ম ১৯৫২ সালে, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মোশাররফ হোসেন এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছা। মোশাররফ হোসেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের স্থানীয় বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্নের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক করেন।
রাজনীতি
নোয়াখালী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কোম্পানীগঞ্জ থানা শাখার অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুনিরা নৃশংসভাবে হত্যা করার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের ৫ বছর জেল খেটেছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দুই মেয়াদে এই দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
ওবায়দুল কাদের ১৯৯১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৭ বার নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন। প্রথম ছয় বারই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মওদুদ আহমদ।
১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়ে তৎকালীন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মওদুদ আহমদের কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন।
সপ্তম জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই এই মন্ত্রিসভা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমেদের কাছে পরাজিত হন।
২০০২ সালে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে এবং একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে নবম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন ওবায়দুল কাদের।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘সভাপতিমন্ডলীর সদস্য’ নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১২ সালে কিছু সময়ের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেন।
২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।