অনলাইন ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘরে অবস্থান করছে প্রায় সবাই। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনতে অনেকেই নির্ভর করছে অনলাই মার্কেট প্লেস বা ই-কমার্স সাইটগুলোর উপর। স্বশরীরে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করার ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে পণ্য অর্ডার করছে গ্রাহকরা। প্রকৃতপক্ষে, অনলাইন কেনাকাটায় সুবিধা তো পাচ্ছেই না, পোহাচ্ছে ভোগান্তি।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের সাইটে বিভিন্ন রকম পণ্যের অফার ও অর্ডারকৃত পণ্যটি সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসছে। এ অফার ও প্রতিশ্রুতি দেখে ক্রেতারা অনলাইনে পণ্যের অর্ডার করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছে তো দিচ্ছেই না বরং তাদের ক্যাশ ব্যাক দেওয়ারও নাম নেই। এমন ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে দারাজ, প্রিয়শপ,গ্রামীণফোন, রবিশপসহ আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান।
করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে ৫০ টাকার মাস্ক দুই হাজার দুইশ’ ৫৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিলো অনলাইন শপিং মার্কেটপ্লেস দারাজ ডটকম। বাড়তি দামে মাস্ক বিক্রির এ অভিযোগে দারাজকে দুই লাখ টাকা জরিমানাও করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দারাজ অনলাইন শর্পিং নামের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের মন্তব্য। এখানে ফিরোজ আহম্মেদ নামের একজন ভুক্তভোগী তার মন্তব্যে লিখেছেন, অর্ডার নেওয়ার একমাস পরে তা বাতিল করা হয়। সে জানতে চেয়েছে, পণ্য ডেলিভারি একটু দেরীতে হতে পারে কিন্তু অর্ডার বাতিল হয় কীভাবে? লুত্ফুজ্জামান জুয়েল নামের আর এক ভুক্তভোগী তার মন্তব্যে লিখেছেন, ১১ এপ্রিল তিনি ফুল পেমেন্ট করে অর্ডার করেছেন কিন্তু এখন জানানো হলো তার অর্ডারটি বাতিল হয়েছে। তিনি এই প্ল্যাটফর্মের সার্ভিস সম্পর্কে মোটেও খুশি নন।
পেমেন্ট করেছেন হেডফোনের, দারাজ পাঠিয়েছে ওটিজি কেবল-বলে অভিযোগ বদরুদ্দোজা মাহমুদ নামের এক ক্রেতার। অভিযোগের পর পিকআপ পয়েন্ট থেকে হেডফোন নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় তাকে। তাহলে আর অনলাইনের মাজেজা থাকল কি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ফেসবুকে ‘ই-কমার্স রিভিউজ’ নামে জনপ্রিয় একটি গ্রুপ আছে। ক্রেতারা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এ গ্রুপে। সেখানে আব্দুল্লাহ আল মুকিত দারাজে অর্ডার করা বাইক নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
তার অভিযোগ বাইকের দামসহ ডেলিভারি চার্জ একবারে পরিশোধের পরও তার কাছ থেকে ডেলিভারি বাবদ এক হাজার টাকা দাবি করে দারাজ। কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয়, ‘আগে দারাজের নিয়ম অনুযায়ী ডেলিভারি দেওয়া হতো, এখন আলিবাবার নিয়ম আলাদা। তাই ম্যানয়ালি ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে!’
দেশের সবচে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও অনলাইনে কেনাবেচা করছেন, জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন গ্রাহক জানিয়েছেন তার পণ্যটি ৯ দিন হয়ে গেলেও এখনো আসেনি এমনকি কোনো মেইল ও দেওয়া হয়নি।
তারিক রায়হান মিঠু নামের একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, অনেক ই-কমার্স সাইট আছে যারা মাত্র এক ঘন্টায় আবার কেউ এক দিনে পণ্য বাসায় পৌঁছে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়ে অর্ডার নিয়ে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারছে না তারা। আমি এমন অর্ডার করে ২৪ দিনেও ডেলিভারি পাইনি। প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তাদের কথা ও কাজের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। আর একজন ভুক্তভোগী প্রিয়শপ ডটকমে অর্ডার করে বসে আছে দুইদিন ধরে। অগ্রিম টাকা গ্রহণের পর এখন তারা আর ফোন রিসিভ করছে না। ভোক্তভোগীর মনে প্রশ্ন জেগেছে, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ নাকি?
মুশফিকুর রহমান নামের একজন ভুক্তভোগী ক্রেতা জানিয়েছেন, প্রিয়শপ ডটকমে তিনি ৩১ মার্চ (অর্ডার নম্বর- ২২৮৬৯৫) কিছু পণ্য অর্ডার করেছেন। সংবাদটি সম্পাদনা হওয়া পর্যন্ত তিনি তার পণ্য বুঝে পাননি। তিনি আরো জানান, পণ্যটি বুঝে পেতে অন্তত দশ বার ফোন করেছেন। কাস্টমার সার্ভিস থেকে প্রতিবারই আশ্বাস দেওয়া হলেও পণ্যটি পায়নি তিনি।
দেবজিত্ সরকার দাস নামের একজন ভুক্তভোগী ক্রেতা রবিশপ ডটকমের ফেসবুক পেজে মন্তব্যে লিখেছেন, তিনি একটি ঘড়ি (অর্ডার নম্বর আরএস ০০০০৫১৮২০) অর্ডার করেছেন। তিনি সঠিক সময়ে তার পণ্যটি হাতে পাননি। কর্তৃপক্ষের কাজে জানতে চেয়েছেন কবে নাগাদ পণ্যটি হাতে পাওয়া যাবে? কর্তৃপক্ষ তাকে কাস্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করতে বলেন।
তিনি পুনরায় যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন এলাকাতে লক ডাউন রয়েছে। এতে তাদের ডেলিভারি কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আরো সময় প্রার্থনা করেন। তবুও ক্রেতার জানতে চেয়েছে তার কাঙ্খিত পণ্যটি কবে পাবে?
অনেকে মনে করছেন,ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেদের সক্ষমতা না বাড়িয়েই অর্ডার নিচ্ছে আর ডেলিভারি দিতে পারছে না। অনেকের ওয়েবসাইটের কারিগরি দিক এখনো মানসম্মত হয়নি। এক গ্রাহক জানিয়েছে প্রিয়শপ ডটকমে পেমেন্ট অপশনে কোনো পেমেন্ট প্রচেসরও দেখায় না।
এরকম হাজারো সমস্যা নিয়ে মাঠে নেমেছে ই-কমার্সে। পণ্য না দিতে পারলে যে টাকা ফেরত দিবে তার ও কোন ব্যবস্থা নাই। ফলে গ্রাহককে মাসের পর মাস অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও থাকে না।
করোনা ভাইরাস অনলাইন কেনাকাটা ই-কমার্স ভোগান্তি