অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেশবাসীকে আবারও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আগুনে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ও গোডাউন পুড়ে গেছে। এতে নিঃস্ব হয়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। মার্কেটটির দোকান মালিক সমিতির দাবি, অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন পরপরই এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রতিটি ঘটনাতেই জানমালের ক্ষতি হয়, নিঃস্ব হয় মানুষ। দিন দিন এ ক্ষয়ক্ষতি কেবল বাড়ছেই। ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কার্যক্রমের ২০২২ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যায়, সারা দেশে গত দুই বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের ১৪ মাস ১০ দিনে সারা অগ্নিকাণ্ডে দেশে মারা গেছে ১৪৫ জন।
সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৪২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ পুড়েছে। এর আগের বছর ২১ হাজার ৬০১টি অগ্নিকাণ্ডে ২১৮ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়। আর ২০২০ সালে সারা দেশে ২১ হাজার ৭৩টি আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি টাকা।
২০২১ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২১৯ জন মারা গেলেও ২০২২ সালে মারা গেছেন ৯৮ জন। এর আগে ২০২০ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা ছিল ১৫৪ জন। গত বছর অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে পুরুষ ৭২ এবং ১৩ জন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মী নিহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে শর্ট সার্কিট বা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে। ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ৯ হাজার ২৭৫টি আগুনের ঘটনা ঘটে, যা মোট আগ্নিকাণ্ডের ৩৮.৪৮ শতাংশ। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৭ টাকা।
এ ছাড়া গত বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নিকাণ্ড ঘটে বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে। এ থেকে তিন হাজার ৮৭৮টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে, যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ১৬.০৮ শতাংশ। এসব আগুনে ক্ষতি ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৬৪ টাকা।
অন্যদিকে বৈদ্যুতিক, গ্যাস ও মাটির চুলা থেকে সৃষ্ট অগ্নিদুর্ঘটনার সংখ্যা তিন হাজার ৩৬৮টি, যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ১৩.৯৮ শতাংশ। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৮৩ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ৮২৯ টাকা। এ ছাড়া উত্তপ্ত ছাই বা জ্বালানি থেকে ৪৮৮টি, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলায় ঘটনায় ৬০২টি, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণজনিত ঘটনায় ১৬৭টি, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় (শত্রুতামূলক ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক) ১৫৭টি, বজ্রপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৪৮টি, বাজি পোড়ানোর ঘটনায় ৯৪টি, মাত্রাতিরিক্ত তাপে ১৬৫টি, মেশিনের মিস ফায়ারে ১৬০টি, স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বালনে ২৯টি, চিমনির স্ফুলিঙ্গ থেকে ১৩টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১৯টি, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ২৯টি, বিস্ফোরণে (সিলিন্ডার ও বয়লার) ৯৪টি, যানবাহনের দুর্ঘটনাজনিত কারণে ৩০৩টি এবং অজ্ঞাত (রহস্যজনক) কারণে চার হাজার ৯১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।