প্লাস্টিকের এক ক্যারেট আঙ্গুরের ওজন প্রায় ২২ কেজি । ক্যারেট ওজন বাদ দিলে নীট আঙ্গুর ফল থাকে ২০ কেজি ৩শ গ্রাম। অর্থাৎ প্রতিটি ক্যারেটের ওজন ১ কেজি ৭শ গ্রাম । ভারত থেকে আমদানিজাত প্রতিট্রাকে আঙ্গুর ফল থাকে প্রায় ১ হাজার ক্যারেট। এক হাজার ক্যারেটের হিসাব অনুযায়ী প্রতিট্রাকে টিআর বাবদ ওজন বাদ যায় ১টন ৭০ কেজি । এবং নীট আঙ্গুর ফল থাকে ২০ টনের ঊর্ধ্বে । যার সরকারি শুল্ক নির্ধরণ করা হয় দশ লাখ টাকার অধিক। ভোমরা স্থল বন্দর ঘুরে কাস্টমস এর শুল্ক নির্ধারণের এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। ভরা মৌসুমে ভোমরাবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ট্রাক ভারতীয় আঙ্গুর ফল আমদানী হয়। অথচ গত বছর এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫ ট্রাক ভারতীয় আঙ্গুর ফল আমাদনি হত। এমনটি হল কেন- জানতেই ট্রান্সপোর্ট কর্মচারী সুমন হোসেন বললেন, ভোমরা বন্দরে ভারতীয় একট্রাক আঙ্গুর ফলে টিআর বাবদ ( খালি ক্যারেটের ওজন)
ওজন একটন ৭শ কেজি বাদ যায়। অপার দিকে সোনা-মসজিদ ও বেনাপোল বন্দরে একট্রাক আঙ্গুরে টিআর বাদ যায় ৪ টন ৭শ কেজি। অর্থাৎ প্রতিট্রাকে ভোমরা বন্দরের তুলনায় একই ওজনের পণ্যে সোনা-মসজিদ ও বেনাপোল বন্দরে তিন টন আঙ্গুরের শুল্ক কম দিয়ে পণ্য ছাড় করানো যায় । সেই হিসাব অনুযায়ী ভারতীয় একট্রাক আঙ্গুর ফল ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করতে গেলে তিন টনের এক লাখ ৫১ হাজার টাকা বেশি শুল্ক দিতে হয় । একই ওজনের পণ্য সোনা-মসজিদ ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারলে একলক্ষ ৫১ হাজার টাকা কম শুল্ক পরিশোধ করলে হয়ে যায় । যার কারণে ভরা মৌসুমে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে ভোমরা বন্দরে ফল আমদানীতে ধ্বস নেমেছে । ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন এখবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এক দেশে কাস্টমসের দ্বৈত নীতির কারণে এখানে ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে ।
ভৌগোলিক অবস্থানের করণে ভারতের কলকাতা শহর থেকে মাত্র ২ ঘন্টা সময়ের দূরত্বে ভোমরা বন্দর অবস্থিত। অতি অল্প সময়ে স্বল্প পরিবহণ খরজে ভারতের কোলকাতাও মহারাষ্ট্রের নাসির থেকে যে কোন ধরণের ফল জাতীয় পণ্য ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানী সম্ভব ।
একাধিক আমদানি কারকের প্রতিনিধিরা জানান, ভোমরা বন্দর দিয়ে ব্যবসা করতে গেলে আমদানিজাত পণ্যের শতভাগ শুল্ক দিতে হয়। আর সোনামসজিদ ও বেনাপোল বন্দরে তিন টনের বেশি ছাড় পাওয়া যায়। ফলে আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
ভোমরা সিএ্যান্ড এফএজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক কর্মকর্তা আমির হামজা জানান, সিলিটের কয়েকটি শুল্ক-স্টেশন দিয়ে ভারতীয় ফল আমদানির ক্ষেত্রে লুটপাট হচ্ছে। আপেল, আনার, কমলা লেবুর আমদানির ক্ষেত্রে অর্ধেক শুল্ক ফাকি দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এসব অসম প্রতিযোগিতার কারণে ভোমরা বন্দরে এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। কাস্টমস সূত্রে জানাযায়, এই বন্দরে ২০১৯-২০অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা । গত সাত মাসে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ১শত ৭৪ কোটি টাকা । ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা-ছিল ১শত ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ।আদায় হয়ে ছিল ১শত ৪০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা । ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১শত ৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা । আদায় হয়েছে ৬৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা । চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ৩শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে ।
ভোমরা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা এনাম আহম্মেদ জানান, রাজস্ব বোডের আমদানি নীতি মালা অনুযায়ী দেশের সকল বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে একই নিয়মে আমদানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় । এক এক জন কমিশনার তার নিজস্ব চিন্তা ধারায় পোট চালান । সোনা মসজিদ ও বেনাপোল বন্দরে টিআরের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তিনিও শুনেছেন । খুলনা কাস্টমস কমিশনার যেভাবে চাইবে সেভাবে ভোমরা বন্দরে আমদানি কার্যক্রম পরিচালিত হবে ।