জাতীয় ডেস্ক :
মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে বসবাসকারীরা। নিরাপত্তার কারণে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে তুমব্রুর কোনারপাড়ার ৩৫টি পরিবার। পরিবর্তন করা হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রও। সর্তক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। আর সীমান্তে চলাচলে আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ।
সীমান্ত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শনিবার সকালেও কয়েকটি গোলার বিকট শব্দ শোনা গেছে। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের কোনারপাড়ায় এসে পড়া অবিস্ফোরিত মর্টার শেলটি শনিবার দুপুরে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
সময় সংবাদের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা নুর হাসিনার। তার বাড়িতে শুক্রবার রাতে এসে পড়ে একটি মর্টার শেল। যা বিস্ফোরিত হয়নি। তবে তার বাড়ির কিছু দূরে আরও একটি মর্টার শেল পড়ে বিস্ফোরিত হয়। যার শব্দে কেঁদে ওঠে নুর হাসিনার ৪ মাসের কন্যা শিশু। এ আতঙ্কে তার পুরো পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছে তুমব্রু মাঝেরপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে।
নুর হাসিনা জানান, মিয়ানমারে মাস ধরে সংঘাত হচ্ছে। এতোদিন গোলার শব্দ শোনা গেছে। অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এপারে এসে পড়েছে। তবে শুক্রবার রাতে ৩টি মর্টার শেল বিস্ফোরণে হতাহত হওয়ার পর থেকে চরম আতঙ্কিত পরিবেশ বিরাজ করছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গেল এক মাসে চলা গোলাগুলিতে কম ভয়ে ছিল সীমান্তের বাসিন্দারা। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনায় এখন বেশ আতঙ্কিত সীমান্তের বাসিন্দারা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। সবাই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও বিজিবির টহল জোরদার করেছে এবং তারা সতর্ক অবস্থানে দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সীমান্তে মিয়ানমারে অভ্যন্তরে গোলাগুলি, মর্টার শেল বিস্ফোরণ পর শনিবার সকালেও কয়েকটি গোলার বিকট শব্দ হয়েছে। আর শূন্যরেখায় মর্টার শেলের বিস্ফোরণে আহতরা এখনও উখিয়ার কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।
শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, আগের চেয়ে শুক্রবারের ঘটনার পর রোহিঙ্গারা আরও বেশি আতঙ্কিত। কিন্তু তারা এখনও শূন্যরেখায় অবস্থান করছেন। বুঝতে পারছেন না কি করবেন।
এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত এবং কয়েকজন আহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান জানান, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এতে হতাহতের ঘটনায় বিজিবি প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে।
তিনি জানান, মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে বিজিবি সর্তকাবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বিজিবি।
শুক্রবার সকালে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের কাছে ‘মাইন বিস্ফোরণে’ বাংলাদেশি যুবক অংথোয়াইং তঞ্চঙ্গার (২২) একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন। রাতে মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এতে এক রোহিঙ্গা নিহত এবং কয়েকজন আহত হন।